**নারী পাচার** /মামলার কজলিষ্ট কি?/ ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের অধীনে স্ত্রী নিম্নোক্ত ৯টি কারণের যে কোনো এক বা একাধিকের ভিত্তিতে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করতে পারেন/মুসলিম আইনে হেবা বা দান
**নারী পাচার**
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী) আইন-২০০৩ এর ধারা ৫ এ বলা হয়েছে
৫৷ (১) যদি কোন ব্যক্তি পতিতাবৃত্তি বা বেআইনী বা নীতিবিগর্হিত কোন কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে কোন নারীকে বিদেশ হইতে আনয়ন করেন বা বিদেশে পাচার বা প্রেরণ করেন অথবা ক্রয় বা বিক্রয় করেন বা কোন নারীকে ভাড়ায় বা অন্য কোনভাবে নির্যাতনের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করেন, বা অনুরূপ কোন উদ্দেশ্যে কোন নারীকে তাহার দখলে, জিম্মায় বা হেফাজতে রাখেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক বিশ বত্সর কিন্তু অন্যুন দশ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
(২) যদি কোন নারীকে কোন পতিতার নিকট বা পতিতালয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবস্থাপকের নিকট বিক্রয়, ভাড়া বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা হয়, তাহা হইলে যে ব্যক্তি উক্ত নারীকে অনুরূপভাবে হস্তান্তর করিয়াছেন তিনি, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, উক্ত নারীকে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা হস্তান্তর করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং তিনি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷
(৩) যদি কোন পতিতালয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী বা পতিতালয়ের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কোন ব্যক্তি কোন নারীকে ক্রয় বা ভাড়া করেন বা অন্য কোনভাবে কোন নারীকে দখলে নেন বা জিম্মায় রাখেন, তাহা হইলে তিনি, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, উক্ত নারীকে পতিতা হিসাবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে ক্রয় বা ভাড়া করিয়াছেন বা দখলে বা জিম্মায় রাখিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷
মামলার কজলিষ্ট কি?
আমরা মামলা-মোকদ্দমার বাদী/বিবাদীরা আদালতে, আইনজীবীদের টেবিলে প্রায়শঃই একটি লাল মলাটের খাতা দেখতে পাই, এটিই ঐ আদালতের মামলার কজলিষ্ট। কজলিষ্টে সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর নং, আগামী ধার্য্য তারিখ, মামলার পর্যায়/আদেশ/রায় ও বাদী-বিবাদীর নাম লেখা থাকে। বাংলাদেশের মহামান্য সূপ্রীমকোর্ট-হাইকোর্ট থেকে শুরু করে ট্রাইব্যূনালে, জজ/ম্যাজিষ্ট্রেট সহ প্রত্যেকটি আদালতে একই আদলের এই 'মামলার কজলিষ্ট' আছে। এই মামলার কজলিষ্ট সর্ব সাধারণের জন্য উন্মূক্ত। এই কজলিষ্ট মহামান্য হাইকোর্টের অধীনে সরকারী মূদ্রণালয় থেকে মূদ্রিত এবং কজলিষ্টের প্রত্যেকটি পাতায় (মামলার দৈনিক কার্যতালিকায়) সংশ্লিষ্ট আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট/বিচারক/ রেজিষ্ট্রার/বিচারপতি (আদালতে আসীন ও প্রস্থানের সময় সহ) কর্তৃক স্বাক্ষর করা। যে কোন মামলার যে কোন বাদী-বিবাদী আদালতে থাকা মামলার কজলিষ্ট দেখে নিজের মামলার নং, বিচারের পর্যায় ও পরবর্তী ধার্য্য তারিখ জেনে নিতে পারেন॥
১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের অধীনে স্ত্রী নিম্নোক্ত ৯টি কারণের যে কোনো এক বা একাধিকের ভিত্তিতে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করতে পারেন:
(১) স্বামী ৪ বছরের অধিক সময় নিরুদ্দেশ থাকলে;
(২) দুই বছর যাবত্ স্ত্রীর খোরপোষ দিতে স্বামী ব্যর্থ হলে;
(৩) স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙঘন করে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে;
(৪) স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে;
(৫) কোনো যুক্তি-সঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে স্বামী তাঁর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে;
(৬) স্বামী বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করার সময়পর্যন্ত বজায় থাকলে;
(৭) স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা মারাত্বক যৌনব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে;
(৮) নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে থাকলে অথবা সাবালকত্ব লাভের পর অর্থাত্ ১৮ বছর পূর্ণ হবার পর স্ত্রীর বিয়ে অস্বীকার করলে (কিন্তু এক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকলে এরকম মামলা দায়ের করা যাবে না)
(৯) নিম্নলিখিত যে কোনো অর্থে স্ত্রীর সাথে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে:
(ক) যদি স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা;
(খ) কুখ্যাত মহিলাদের (women of ill reputation) সঙ্গে স্বামীর মেলামেশা করা কিংবা নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপন করা।
(গ) নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা;
(ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করা, কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির বৈধ অধিকার প্রয়োগে দেওয়া;
(ঙ) স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া;
(চ ) যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে পবিত্র কোরানের নির্দেশে তাদের সাথে সমান ব্যবহার না করা;
তবে উপরোক্ত কারণগুলির ভিত্তিতে মামলা দায়ের করতে হলে স্ত্রীর কাছে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকতে হবে।
মুসলিম আইনে হেবা বা দান
কিভাবে দান করা যায়: মুসলিম আইনে দানের উপায় অতি সহজ।তিনটি শর্ত পূরণান্তে একটি দান সম্পাদিত হতে পারে।যেমন দাতা কতৃক দান ঘোষণা, দানগ্রহীতা কতৃক তা গ্রহণে স্বীকৃতি এবং দাতা কতৃক দানকৃত সম্পত্তি দানগ্রহীতার বরাবরে দখল অর্পণ।
প্রথমত: দানের জন্য শুদ্ধ ঘোষণা:
ঘোষণা দু,ভাবে ক) মৌখিক খ) লিখিত দলিল দ্বারা।
ক) মৌখিক ঘোষণা: মৌখিক ঘোষণা দ্বারা যদি প্রমানিত হয় যে, দানটি আইনগতভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে তাহলে মৌখিক ঘোষণা দ্বারা দান করা যায়।
উক্ত ঘোষনাটি দলিলে লিপিবদ্ধ করে রেজিষ্ট্রী করা না হলে ও দানটি বৈধ।সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৯ ধারা নিম্নরুপ।
১২-ধারা মৃত্যু সম্ভাবনাজনিত দানের ব্যতিক্রম ও মুসলিম আইন: এই অধ্যায়ের কোন কিছু মৃত্যুর সম্ভাবনাকালে অস্থাবর সম্পত্তি দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা অথবা মুসলিম আইনের কোন বিধানকে প্রভাবিত করেছে বলে গণ্য হবে না। এই ধারায় বলা হয়েছে যে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের কোন বিধানকে প্রভাবিত করেছে বলে গণ্য হবে না। এই ধারায় বলা হয়েছে যে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের অষ্টম অধ্যায় ইসলামী অাইনের অধীন দানের প্রযোজ্য নয়।
খ) লিখিত দান: দাতা লিখিত দলিল মূলে তার সম্পত্তি দান করতে পারে।রেজিষ্ট্রেশন আইনের বিধান মতে দানটির মূল্য একশত টাকার উধ্বে হলে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।এতে মুসলিম আইনের বিধান মতে অন্যান্য শতাবলী পূরণ ব্যতীত কেবলমাত্র রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে দান বৈধ হবে না ।
দ্বিতীয়ত: দখল অর্পণ:
(১) একটি বৈধ দান সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য দানের বিষয়বস্ত দান গ্রহীতার অনূকূলে দখল অর্পণ অপরিহায।দাতাকে দানের বিষয়বস্ত অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। আলোচ্য ওয়াকফ আইন ১৯৬২ এর ১২৯ ধারা এই বিধান দিয়েছে যে, বর্তমান ধারা মুসলমানদের উপর প্রযোজ্য নয়। মুসলিম আইনে দখল অর্পণ অত্যন্ত মূল্যবান।দখল-অর্পণের সাথে সাথেই দান কাযকরী হয়।দখল অর্পনের সাথে সাথে যদি একটি দলিল ও করা হয়, সেক্ষেত্রে ঐ দলিল অনাবশ্যক গন্য হবে।ঐ দলিল রেজিষ্ট্রি না হইলে বা প্রত্যায়িত না হইলে এটি বলা যাইবে না যে, দান কাযকরী হয় নাই।মুসলমান আইনে রেজিষ্ট্রী দলিল করিবার কিংবা প্রত্যয়ন করিবার কোন বিধান নাই।
কোন মুসলমান যদি হিন্দুকে সম্পত্তি দান করেন তা মৌখিক করতে পারেন।এক্ষেত্রে বর্তমান ধারা প্রযুক্ত হয়না। হিন্দু আইন ও এক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয় না।
বৌদ্ধ আইনে দানকে সিদ্ধ করতে হলে দখল অর্পণ একান্তভাবে আবশ্যক।বৌদ্ধ আইনের এই বিধান আলোচ্য ধারা রদ ও রহিত করে দিয়েছে ।সুতরাং বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধমাবলম্বিগণ দখল ব্যতিরেকে শুধুমাত্র রেজিষ্ট্রী দলিল দ্বারা দান সম্পন্ন করতে পারেন।
(২) দখল ও রেজিষ্ট্রিকরণ: দানের সম্পত্তিটি দখল না দেয়ার অবৈধতা, দানটি রেজিষ্ট্রিকৃত করলেই বৈধ হবে না।
(৩) দখল প্রদান করা হয়েছে এ মমে দান পত্রে প্রদত্ত কোন ঘোষনা দাতার ওয়ারিসকে বাধ্য করবে।
(৪) দান নামায় নাবালক ভাইপোকে দখল দেয়া হয়েছে মমে ঘোষণা, পিতা বা অভিভাবকের মাধ্যম ছাড়া দাতার ওয়ারিসদের বিরুদ্ধে স্বত্ব সৃষ্টির জন্য যথেষ্ঠ নয়।
(৫) সম্পত্তিটি দাতা ও দানগ্রহীতার উভয়ের দখলে থাকবে: দানকালে যদি দানের বিষয়বস্ততে দাতা ও দানগ্রহীতা উভয়ে যদি একত্রে বসবাস করে, এমন ক্ষেত্রে দাতার শারীরিকভবে উক্ত দানের বিষয়বস্ত পরিত্যাগ এবং দান-গ্রহীতা কতৃক দখল গ্রহন আবশ্যক নয়।এক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরে পরিস্কার মানসিকতা দাতার থাকলে দানটি বৈধ হবে।সম্পত্তিটি দান গ্রহীতার অনুকূলে দখল অর্পণ করতে হবে কিংবা মালিকানা সংক্রান্ত দখল হস্তান্তর করতে হবে কিংবা রাজস্ব খাতায় দান গ্রহীতার নামজারী করতে হবে।
(৬) দাতা -দানগ্রহীতা: দানের বিষয়বস্তুর দখল দানের বিষয় যা কিছু করণীয় তা করে থাকলে দানটি বৈধ।
(৭) বস্তুস্ব হীন সম্পত্তি ও মোকাদ্দমার দাবী দান সংক্রান্ত দখল:
দাতা কতৃক ঘোষিত দানের বিষয় বস্তুটি যদি বস্তু স্বত্বাধীন সম্পত্তি বা মোকাদ্দমাযোগ্য দাবী হয়ে থাকে।সেক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তি হতে দাতার সমুদয় অধিকার প্রত্যাহার করে দান গ্রহীতার কাছে দখলদানের জন্য পরিস্কার মনোভাব প্রদর্শন করলে দানটি সম্পূর্ণ হবে।
(৮) সরকারী অঙ্গীকার পত্র: সরকারী অঙ্গীকারগণের দান, পত্র সমর্থন ও দানগ্রহীতাকে হস্তান্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে ।যেমন উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে, রাজন জমাকৃত টাকার, যা হস্তান্তর যোগ্য নয় একটি রশিদ, স্ত্রীকে অর্পনান্তে বললো, আমি এটি তোমার নামে ব্যাংকে গিয়ে হস্তান্তর করবো।হস্তান্তরের আগেই সে মারা গেল।দানটি অসম্পূণ।
(৯) প্রত্যয় ও অবস্থার প্রেক্ষিত দখল: দাতা কতৃর্ক দানকৃত কোন কোন সম্পদ করা যায় এবং কোন কোন গুলো হস্তান্তর করা যায়না -এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।সুতরাং দানের বৈধতার বেলায় এটি বিবেচনাযোগ্য।
(১০) দখলবিহীন দান: দখলবিহীন দান গোড়া থেকেই বাতিল।
(১১) যেমন দখল ছিল তেমন দান: দাতা দানকৃত সম্পত্তিতে যেমন দখল ছিল, ঠিক তেমনি দখল দান গ্রহীতাকে দখল অর্পণ করবেন ।
(১২) আদালতের বিবেচনা: আদালতকে দখলের প্রকৃতি ও বিরাজমান অবস্থা খুঁটিয়ে দেখতে হবে যে, ঠিক তেমনি দখল দানগ্রহীতাকে অর্পণ করবেন।
(১৩) নামজারী: কেবলমাত্র নামজারী দখলদানের বিকল্প নয়।দানের সম্পত্তি হস্তান্তর যথেষ্ঠ, নামজারী নয়।
(১৪) দানের পর দখল: দানটির দখল আইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।পরে উক্ত দানগ্রহীতা কতৃক অন্যের বরাবরে দখলদান করা যেতে পারে এবং তা বৈধই।
(১৫) দলিলে দখল অর্পণের ঘোষণা: দলিলে দখল অর্পণের ঘোষণা থাকলেই যথেষ্ঠ নয়।প্রমাণের মাধ্যমে তা যাচাইযোগ্য।এটি একটি খন্ডনযোগ্য অনুমান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।অনেক ক্ষেত্রে দলিলের দখল অর্পণের ঘোষণা উত্তরাধিকারীদের উপর বাধ্য বাধকতা সৃষ্টি করে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী) আইন-২০০৩ এর ধারা ৫ এ বলা হয়েছে
৫৷ (১) যদি কোন ব্যক্তি পতিতাবৃত্তি বা বেআইনী বা নীতিবিগর্হিত কোন কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে কোন নারীকে বিদেশ হইতে আনয়ন করেন বা বিদেশে পাচার বা প্রেরণ করেন অথবা ক্রয় বা বিক্রয় করেন বা কোন নারীকে ভাড়ায় বা অন্য কোনভাবে নির্যাতনের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করেন, বা অনুরূপ কোন উদ্দেশ্যে কোন নারীকে তাহার দখলে, জিম্মায় বা হেফাজতে রাখেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক বিশ বত্সর কিন্তু অন্যুন দশ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
(২) যদি কোন নারীকে কোন পতিতার নিকট বা পতিতালয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবস্থাপকের নিকট বিক্রয়, ভাড়া বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা হয়, তাহা হইলে যে ব্যক্তি উক্ত নারীকে অনুরূপভাবে হস্তান্তর করিয়াছেন তিনি, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, উক্ত নারীকে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা হস্তান্তর করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং তিনি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷
(৩) যদি কোন পতিতালয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী বা পতিতালয়ের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কোন ব্যক্তি কোন নারীকে ক্রয় বা ভাড়া করেন বা অন্য কোনভাবে কোন নারীকে দখলে নেন বা জিম্মায় রাখেন, তাহা হইলে তিনি, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, উক্ত নারীকে পতিতা হিসাবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে ক্রয় বা ভাড়া করিয়াছেন বা দখলে বা জিম্মায় রাখিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷
মামলার কজলিষ্ট কি?
আমরা মামলা-মোকদ্দমার বাদী/বিবাদীরা আদালতে, আইনজীবীদের টেবিলে প্রায়শঃই একটি লাল মলাটের খাতা দেখতে পাই, এটিই ঐ আদালতের মামলার কজলিষ্ট। কজলিষ্টে সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোর নং, আগামী ধার্য্য তারিখ, মামলার পর্যায়/আদেশ/রায় ও বাদী-বিবাদীর নাম লেখা থাকে। বাংলাদেশের মহামান্য সূপ্রীমকোর্ট-হাইকোর্ট থেকে শুরু করে ট্রাইব্যূনালে, জজ/ম্যাজিষ্ট্রেট সহ প্রত্যেকটি আদালতে একই আদলের এই 'মামলার কজলিষ্ট' আছে। এই মামলার কজলিষ্ট সর্ব সাধারণের জন্য উন্মূক্ত। এই কজলিষ্ট মহামান্য হাইকোর্টের অধীনে সরকারী মূদ্রণালয় থেকে মূদ্রিত এবং কজলিষ্টের প্রত্যেকটি পাতায় (মামলার দৈনিক কার্যতালিকায়) সংশ্লিষ্ট আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট/বিচারক/ রেজিষ্ট্রার/বিচারপতি (আদালতে আসীন ও প্রস্থানের সময় সহ) কর্তৃক স্বাক্ষর করা। যে কোন মামলার যে কোন বাদী-বিবাদী আদালতে থাকা মামলার কজলিষ্ট দেখে নিজের মামলার নং, বিচারের পর্যায় ও পরবর্তী ধার্য্য তারিখ জেনে নিতে পারেন॥
১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের অধীনে স্ত্রী নিম্নোক্ত ৯টি কারণের যে কোনো এক বা একাধিকের ভিত্তিতে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থনা করতে পারেন:
(১) স্বামী ৪ বছরের অধিক সময় নিরুদ্দেশ থাকলে;
(২) দুই বছর যাবত্ স্ত্রীর খোরপোষ দিতে স্বামী ব্যর্থ হলে;
(৩) স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙঘন করে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে;
(৪) স্বামী সাত বছর বা তার বেশি সময় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে;
(৫) কোনো যুক্তি-সঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে স্বামী তাঁর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে;
(৬) স্বামী বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করার সময়পর্যন্ত বজায় থাকলে;
(৭) স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা মারাত্বক যৌনব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে;
(৮) নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে থাকলে অথবা সাবালকত্ব লাভের পর অর্থাত্ ১৮ বছর পূর্ণ হবার পর স্ত্রীর বিয়ে অস্বীকার করলে (কিন্তু এক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকলে এরকম মামলা দায়ের করা যাবে না)
(৯) নিম্নলিখিত যে কোনো অর্থে স্ত্রীর সাথে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে:
(ক) যদি স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা;
(খ) কুখ্যাত মহিলাদের (women of ill reputation) সঙ্গে স্বামীর মেলামেশা করা কিংবা নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপন করা।
(গ) নৈতিকতা-বর্জিত জীবন যাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা;
(ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করা, কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির বৈধ অধিকার প্রয়োগে দেওয়া;
(ঙ) স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া;
(চ ) যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে পবিত্র কোরানের নির্দেশে তাদের সাথে সমান ব্যবহার না করা;
তবে উপরোক্ত কারণগুলির ভিত্তিতে মামলা দায়ের করতে হলে স্ত্রীর কাছে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকতে হবে।
মুসলিম আইনে হেবা বা দান
কিভাবে দান করা যায়: মুসলিম আইনে দানের উপায় অতি সহজ।তিনটি শর্ত পূরণান্তে একটি দান সম্পাদিত হতে পারে।যেমন দাতা কতৃক দান ঘোষণা, দানগ্রহীতা কতৃক তা গ্রহণে স্বীকৃতি এবং দাতা কতৃক দানকৃত সম্পত্তি দানগ্রহীতার বরাবরে দখল অর্পণ।
প্রথমত: দানের জন্য শুদ্ধ ঘোষণা:
ঘোষণা দু,ভাবে ক) মৌখিক খ) লিখিত দলিল দ্বারা।
ক) মৌখিক ঘোষণা: মৌখিক ঘোষণা দ্বারা যদি প্রমানিত হয় যে, দানটি আইনগতভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে তাহলে মৌখিক ঘোষণা দ্বারা দান করা যায়।
উক্ত ঘোষনাটি দলিলে লিপিবদ্ধ করে রেজিষ্ট্রী করা না হলে ও দানটি বৈধ।সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৯ ধারা নিম্নরুপ।
১২-ধারা মৃত্যু সম্ভাবনাজনিত দানের ব্যতিক্রম ও মুসলিম আইন: এই অধ্যায়ের কোন কিছু মৃত্যুর সম্ভাবনাকালে অস্থাবর সম্পত্তি দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা অথবা মুসলিম আইনের কোন বিধানকে প্রভাবিত করেছে বলে গণ্য হবে না। এই ধারায় বলা হয়েছে যে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের কোন বিধানকে প্রভাবিত করেছে বলে গণ্য হবে না। এই ধারায় বলা হয়েছে যে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের অষ্টম অধ্যায় ইসলামী অাইনের অধীন দানের প্রযোজ্য নয়।
খ) লিখিত দান: দাতা লিখিত দলিল মূলে তার সম্পত্তি দান করতে পারে।রেজিষ্ট্রেশন আইনের বিধান মতে দানটির মূল্য একশত টাকার উধ্বে হলে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।এতে মুসলিম আইনের বিধান মতে অন্যান্য শতাবলী পূরণ ব্যতীত কেবলমাত্র রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে দান বৈধ হবে না ।
দ্বিতীয়ত: দখল অর্পণ:
(১) একটি বৈধ দান সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য দানের বিষয়বস্ত দান গ্রহীতার অনূকূলে দখল অর্পণ অপরিহায।দাতাকে দানের বিষয়বস্ত অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। আলোচ্য ওয়াকফ আইন ১৯৬২ এর ১২৯ ধারা এই বিধান দিয়েছে যে, বর্তমান ধারা মুসলমানদের উপর প্রযোজ্য নয়। মুসলিম আইনে দখল অর্পণ অত্যন্ত মূল্যবান।দখল-অর্পণের সাথে সাথেই দান কাযকরী হয়।দখল অর্পনের সাথে সাথে যদি একটি দলিল ও করা হয়, সেক্ষেত্রে ঐ দলিল অনাবশ্যক গন্য হবে।ঐ দলিল রেজিষ্ট্রি না হইলে বা প্রত্যায়িত না হইলে এটি বলা যাইবে না যে, দান কাযকরী হয় নাই।মুসলমান আইনে রেজিষ্ট্রী দলিল করিবার কিংবা প্রত্যয়ন করিবার কোন বিধান নাই।
কোন মুসলমান যদি হিন্দুকে সম্পত্তি দান করেন তা মৌখিক করতে পারেন।এক্ষেত্রে বর্তমান ধারা প্রযুক্ত হয়না। হিন্দু আইন ও এক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয় না।
বৌদ্ধ আইনে দানকে সিদ্ধ করতে হলে দখল অর্পণ একান্তভাবে আবশ্যক।বৌদ্ধ আইনের এই বিধান আলোচ্য ধারা রদ ও রহিত করে দিয়েছে ।সুতরাং বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধমাবলম্বিগণ দখল ব্যতিরেকে শুধুমাত্র রেজিষ্ট্রী দলিল দ্বারা দান সম্পন্ন করতে পারেন।
(২) দখল ও রেজিষ্ট্রিকরণ: দানের সম্পত্তিটি দখল না দেয়ার অবৈধতা, দানটি রেজিষ্ট্রিকৃত করলেই বৈধ হবে না।
(৩) দখল প্রদান করা হয়েছে এ মমে দান পত্রে প্রদত্ত কোন ঘোষনা দাতার ওয়ারিসকে বাধ্য করবে।
(৪) দান নামায় নাবালক ভাইপোকে দখল দেয়া হয়েছে মমে ঘোষণা, পিতা বা অভিভাবকের মাধ্যম ছাড়া দাতার ওয়ারিসদের বিরুদ্ধে স্বত্ব সৃষ্টির জন্য যথেষ্ঠ নয়।
(৫) সম্পত্তিটি দাতা ও দানগ্রহীতার উভয়ের দখলে থাকবে: দানকালে যদি দানের বিষয়বস্ততে দাতা ও দানগ্রহীতা উভয়ে যদি একত্রে বসবাস করে, এমন ক্ষেত্রে দাতার শারীরিকভবে উক্ত দানের বিষয়বস্ত পরিত্যাগ এবং দান-গ্রহীতা কতৃক দখল গ্রহন আবশ্যক নয়।এক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরে পরিস্কার মানসিকতা দাতার থাকলে দানটি বৈধ হবে।সম্পত্তিটি দান গ্রহীতার অনুকূলে দখল অর্পণ করতে হবে কিংবা মালিকানা সংক্রান্ত দখল হস্তান্তর করতে হবে কিংবা রাজস্ব খাতায় দান গ্রহীতার নামজারী করতে হবে।
(৬) দাতা -দানগ্রহীতা: দানের বিষয়বস্তুর দখল দানের বিষয় যা কিছু করণীয় তা করে থাকলে দানটি বৈধ।
(৭) বস্তুস্ব হীন সম্পত্তি ও মোকাদ্দমার দাবী দান সংক্রান্ত দখল:
দাতা কতৃক ঘোষিত দানের বিষয় বস্তুটি যদি বস্তু স্বত্বাধীন সম্পত্তি বা মোকাদ্দমাযোগ্য দাবী হয়ে থাকে।সেক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তি হতে দাতার সমুদয় অধিকার প্রত্যাহার করে দান গ্রহীতার কাছে দখলদানের জন্য পরিস্কার মনোভাব প্রদর্শন করলে দানটি সম্পূর্ণ হবে।
(৮) সরকারী অঙ্গীকার পত্র: সরকারী অঙ্গীকারগণের দান, পত্র সমর্থন ও দানগ্রহীতাকে হস্তান্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে ।যেমন উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে, রাজন জমাকৃত টাকার, যা হস্তান্তর যোগ্য নয় একটি রশিদ, স্ত্রীকে অর্পনান্তে বললো, আমি এটি তোমার নামে ব্যাংকে গিয়ে হস্তান্তর করবো।হস্তান্তরের আগেই সে মারা গেল।দানটি অসম্পূণ।
(৯) প্রত্যয় ও অবস্থার প্রেক্ষিত দখল: দাতা কতৃর্ক দানকৃত কোন কোন সম্পদ করা যায় এবং কোন কোন গুলো হস্তান্তর করা যায়না -এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।সুতরাং দানের বৈধতার বেলায় এটি বিবেচনাযোগ্য।
(১০) দখলবিহীন দান: দখলবিহীন দান গোড়া থেকেই বাতিল।
(১১) যেমন দখল ছিল তেমন দান: দাতা দানকৃত সম্পত্তিতে যেমন দখল ছিল, ঠিক তেমনি দখল দান গ্রহীতাকে দখল অর্পণ করবেন ।
(১২) আদালতের বিবেচনা: আদালতকে দখলের প্রকৃতি ও বিরাজমান অবস্থা খুঁটিয়ে দেখতে হবে যে, ঠিক তেমনি দখল দানগ্রহীতাকে অর্পণ করবেন।
(১৩) নামজারী: কেবলমাত্র নামজারী দখলদানের বিকল্প নয়।দানের সম্পত্তি হস্তান্তর যথেষ্ঠ, নামজারী নয়।
(১৪) দানের পর দখল: দানটির দখল আইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।পরে উক্ত দানগ্রহীতা কতৃক অন্যের বরাবরে দখলদান করা যেতে পারে এবং তা বৈধই।
(১৫) দলিলে দখল অর্পণের ঘোষণা: দলিলে দখল অর্পণের ঘোষণা থাকলেই যথেষ্ঠ নয়।প্রমাণের মাধ্যমে তা যাচাইযোগ্য।এটি একটি খন্ডনযোগ্য অনুমান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।অনেক ক্ষেত্রে দলিলের দখল অর্পণের ঘোষণা উত্তরাধিকারীদের উপর বাধ্য বাধকতা সৃষ্টি করে।
'মামলার কজলিষ্ট কি?" জাতীয় লেখাগুলোর লেখকের নামটা কোথায়,কেন হারিয়ে যায়?
ReplyDelete