প্রাচীন পৃথিবীতে বিচার ব্যবস্থা,অদ্ভুত বিচার ব্যবস্থা ,আইনের যত অসংগতি
প্রাচীন পৃথিবীতে বিচার ব্যবস্থা
অন্যায়ের জন্য শাস্তি দেওয়ার প্রচলন এই পৃথিবীতে বহু বহু বছর আগে থেকেই ছিল। সমাজের প্রধানরা তাঁদের ধর্মীয় বিদ্যাবুদ্ধি ও নৈতিক চিন্তাধারা ব্যবহার করে দোষীর শাস্তি বিধান করতেন। ধীরে ধীরে তাঁদের এই চিন্তাধারা লিখিত রূপ পেয়ে আইন হিসাবে পরিণত হয়। তবে সে যুগে সব দেশেই কিন্তু আইনের সঙ্গে ধর্মের যোগ ছিল না। যেমন প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার আইনসূত্র, যেগুলি ‘কোড অফ হামুরাবি’ বলে পরিচিত, সেগুলি ছিল মোটামুটি ভাবে ধর্ম-নিরপেক্ষ -- ধর্ম ও তত্সংলগ্ন নীতিবোধের প্রভাব তার ওপর বিশেষ ছিল না। হামুরাবি ছিলেন ব্যাবিলনের রাজা। ১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি সিংহাসনে বসেন। তাঁর রাজত্বকালে বড় বড় পাথরের ওপর এই আইনগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়।
অন্যায়ের জন্য শাস্তি দেওয়ার প্রচলন এই পৃথিবীতে বহু বহু বছর আগে থেকেই ছিল। সমাজের প্রধানরা তাঁদের ধর্মীয় বিদ্যাবুদ্ধি ও নৈতিক চিন্তাধারা ব্যবহার করে দোষীর শাস্তি বিধান করতেন। ধীরে ধীরে তাঁদের এই চিন্তাধারা লিখিত রূপ পেয়ে আইন হিসাবে পরিণত হয়। তবে সে যুগে সব দেশেই কিন্তু আইনের সঙ্গে ধর্মের যোগ ছিল না। যেমন প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার আইনসূত্র, যেগুলি ‘কোড অফ হামুরাবি’ বলে পরিচিত, সেগুলি ছিল মোটামুটি ভাবে ধর্ম-নিরপেক্ষ -- ধর্ম ও তত্সংলগ্ন নীতিবোধের প্রভাব তার ওপর বিশেষ ছিল না। হামুরাবি ছিলেন ব্যাবিলনের রাজা। ১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি সিংহাসনে বসেন। তাঁর রাজত্বকালে বড় বড় পাথরের ওপর এই আইনগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়।
২৮২টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত এই আইনসমূহে বাণিজ্য, বিবাহ, দাসত্ব, কর্জ ও চৌর্য
-- সব কিছুই স্থান পেয়েছিল। শাস্তির যে সব বিধান এখানে ছিল, আজকের যুগে
সেগুলি বর্বর মনে হবে। চুরির অপরাধে আঙুল কেটে নেওয়া, বিবাহিত নারীকে কোনও
পরপুরুষ চুম্বন করলে তাঁর ঠোঁট কেটে ফেলা, অপবাদ প্রচারের শাস্তি হল জিভ
কেটে নেওয়া, বাড়ি ভেঙে পড়ে বাড়ির মালিকের পুত্রের মৃত্যু হলে, গৃহনির্মাতার
পুত্রকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ইত্যাদি।
অনুমান করা হয় যে, তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত মিশর ও চিন দেশেও ধর্ম-নিরপেক্ষ আইনের প্রচলন কিছুটা ছিল। অন্য পক্ষে পুরনো যুগে হিন্দু, ইহুদি, খ্রিশ্চান ও মুসলিম সমাজের আইনের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বেদ-উপনিষদ, বাইবেল ও কোরানের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বাইবেলের ‘টেন কমান্ডমেণ্ট’-এর সঙ্গে যে সব আইনের কথা লেখা হয়েছিল, সেগুলিতে শাস্তির বহরও অনেকটা হামুরাবির বিধানের মতোই কঠোর, যাকে অনেক সময় বলা হয় ‘আই ফোর অ্যান আই, টুথ ফর অ্যা টুথ’ (চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত) জাতীয় চিন্তাধারা-প্রসূত।
সময়ের সাথে সাথে আইন ও বিচার ব্যবস্থায় বহু পরিবর্তন এসেছে। এ এক নিরন্তর বিকাশশীল বিষয়।
অদ্ভুত বিচার ব্যবস্থা
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বেশ অদ্ভুত। ১৯৭২ সালে ষোলই ডিসেম্বর যে সংবিধানকে আমরা মাতৃভূমির পিতা বলিয়া মানিয়া লইলাম সেইখানে লেখা ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের একটি বিচার বিভাগ থাকিবে, যাহা হইবে স্বাধীন। সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ ছাড়া বিচারপতিদের অপসারণ করা যাইবে না। এইসব নানা বিষয় সংবিধানে যুক্ত করা হয় যেন বাংলাদেশের ভুদাইগন ন্যায়বিচার পাইতে পারে। কিন্তু কার্যত কি হইল, বিচারবিভাগ নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকিল। আর আমরা এমন এক বিচার ব্যবস্থা পাইলাম যাহার ফলে বিচারকগন বাংলাদেশের ভুদাইগোর চাইতেও বেশি ভুদাই হইয়া গেল। নির্যাতিত মানুষ যেহেতু স্বাধীনতা চায় সেহেতু বিচারপতিগণ বিচারবিভাগের জন্য স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাপাইয়া পড়িলেন। মামলা হইলো, সুপ্রীম কোর্ট বিচার বিভাগ স্বাধীন করবার লাইগা সরকাররে ফাপর দিল, ফলে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা সময়ের ব্যাপারে পরিণত হইলো। একই সময়ে শেখ মুজিব ও জেনারেল জিয়া পরিবারের প্রাধান্য লইয়া কিছু চালাক জনগণ মারামারিতে লিপ্ত, আর তখনই আগাইয়া আসিলো দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। মহান দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তখন আবারও উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হইলেন। কিন্তু জেনারেল মইন কিন্তু জেনারেল এরশাদ হইতে পারিলেন না। তার কারণ বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ততদিনে তাদের পেশাদারিত্বের খোলস ফেলিয়া দিয়া ব্যবসায়ী ও আদম ব্যাপারীতে পরিনত হইয়াছে। জেনারেল মইন ও তার গুরু জেনারেল মাসুদ (যদিও পরে গুরু ল্যাঙ খাইয়া যায়) জনগণকেও রক্ষা করলেন আবার তাদের আদমব্যাবসাও ঠিক রাখিলেন। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের রক্ষিতা গর্ভনর ফকরুদ্দিনকে মুকুট পরাইলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকে সুশীল সমাজের হাতে তুলিয়া দেয়ার খায়েশ তাহাদের ছিল। এই লক্ষে তাহারা নানা কর্ম সম্পাদন করে। কিন্তু +- ফর্মুলা খাটাইয়া দুই পরিবারের দুই প্রধানকে সরাইয়া দিতে গিয়া জেনারেল মইন,জেনারেল মাসুদ ও ফখরুদ্দিন দেখিলেন কাজটা সহজ না। উলটো তাহারা মাইনকা চিপায় পতিত হইলেন। এবং এর সাথে এই কথাও আমাদের সামনে দিয়া গেলেন যে এই দুই পরিবারের বিকল্প নাই। তো এইরকম সময়ে কোন এক বিয়ানবেলায় আমরা জানিতে পারিলাম এক নির্বাহী আদেশবলে নির্বাহী বিভাগ ও বিচারবিভাগের বন্ধন ছিন্ন হইয়াছে। বিচারবিভাগ তার কাংখিত স্বাধীনতা লাভ করিয়াছে। কি স্বাধীনতা বিচার বিভাগ ভোগ করিতেছে? দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মাধ্যমে জানিতে পারিলাম যে সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের পাঁচজন সম্মানিত বিচারক টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক এর মাজার পরিদর্শন করিয়াছেন। ইহাতে কোন আপত্তি নাই। আপত্তি ইহাতেও থাকত না যদি তাহারা এই পরিচয়ে যাইতেন যে তাহারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিচারবিভাগ শাখার নেতা। কিন্তু তাহারা গিয়াছেন বিচারপতির পরিচয়ে, সাথে করিয়া লইয়া গিয়াছেন একপাল আওয়ামী শুয়োর। যেন দলের কাছে দলের প্রতি তাদের আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রমান দেওয়াই তাহাদের লক্ষ্য। যেন তাহাদের সকল দ্বায়বদ্ধতা আওয়ামী লীগের প্রতি। কিন্তু তাহাদের আসলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকিবার কথা ছিল। বিচারবিভাগ স্বাধীন হওয়ার আগেও বিচারকদের নামে দলপ্রীতির অভিযোগ ছিল। কিন্তু তা এতটা প্রকট ছিল না। তখন শোনা যায়নি যে একপাল বিচারক অমুক করিতেছেন তমুক করিতেছেন, তাহারা শ্রদ্ধাবিতরণ করিতেছেন। বিচারবিভাগ স্বাধীন হইবার আগে বিচারকরা দলবাজী করতেন একটা মুখোশ পইরা, আর এখন বিচারকরা দলবাজি করতাছেন মালকোচা মাইরা। মহান দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের রাজনীতি ধ্বংসের যে চক্রান্তে লিপ্ত হইয়াছিল বিচারবিভাগ স্বাধীন করার সিদ্ধান্ত ছিল তার অন্যতম বিষয় বইলাই আমার মনে হয়। বিচারবিভাগ কার্যত স্বাধীন কইরা তারা অস্ত্র দ্বারা তা নিয়ন্ত্রণ করতেছিল। এর ফলে বিচারবিভাগে গোলামী অভ্যাসে পরিণত হইয়াছিল। যা আওয়ামীলীগ আমলেও যাইতে পারে নাই। যেহেতু বিচারকরাও বুঝে গিয়েছিলেন যে বাংলাদেশে এই দুইদলের বিকল্প কিছু নাই, ফলে তারাও নিজেদের সুবিধার লাইগা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে শান্তির আবাস গড়িতে চাইলেন। বাংলাদেশের বিচারকরা সংবিধান সংশোধন বাতিল করতাছেন। কোন সংবিধানগুলা বাতিল করতাছেন? সেই সমস্ত সংশোধন যার রায় আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়। সামনে বি.এন.পি আসবে। তাদের পতাকাতলের বিচারকরা তাদের পছন্দ মতো সংশোধন বাতিল বলিয়া রায় দিবে। কিন্তু যে সংশোধনের মাধ্যমে বেরুবাড়ি ভারতের কাছে হস্তান্তর কিংবা দেশে জরুরী অবস্থা জারি তা কিন্তু বাতিল হইবে না। তো, এই হইলো বিচারবিভাগের স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতা দ্বারা বিচারবিভাগ আরো দলবাজীতে যুক্ত হইলো। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা আসলে এই ব্যবস্থায় সম্ভব না। এই ব্যবস্থায় বিচারবিভাগের স্বাধীনতা একটা ভ্রান্ত ধারণা। এদেশে একটা সুবিধাভোগী শ্রেনীই শুধুমাত্র এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যুক্ত হইতে পারে। তাহাদের সাথে সাধারন মানুষের কোনোই যোগাযোগ নাই। তাহারা সাধারন মানুষ চিনে না। সাধারণ মানুষের সাথে তাহাদের পরিচয় নাই। ফলে তাহাদের কাছ থিকা দলবাজি ব্যতীত আর কিবা আশা করিবার থাকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই দল ব্যতীত কোন উপায় নাই এইটার সাথে আরো দুইটা বিষয় আমাদের সামনে উন্মোচন কইরাছেন। তাহা হইলো এইদেশে জনগণের রাজনীতি ততটা প্রবল হয় নাই(আমি মনে করি, এই দুই পারিবারিক দল ও তাদের জোট জনগণের শত্রু)। আর একটা হইলো জনগণের রাজনীতির সুযোগ আছে। এই সময়ে দরকার জনগণের রাজনীতিকে বিকশিত করা। এবং জনগনের সরকার কায়েম করবার মধ্য দিয়া জনগণের মুক্তি আদায় করা। তাইলেই শুধুমাত্র বিচারবিভাগ কিংবা জনগন সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন হইবার উপায় থাকে। অন্যথায় বিন্দুমাত্র সম্ভাবন অবশিষ্ট থাকিবে না।
আইনের যত অসংগতি
চাঁদা দাবির অপরাধের জন্য দুই ধরনের বিচার-প্রক্রিয়া বিদ্যমান আছে। একটি প্রক্রিয়া দণ্ডবিধির আওতায় দায়রা জজ আদালতের এখতিয়ারাধীন, অপরটি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২-এর আওতায় বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার্য। ২০০২ সালের ১১ নম্বর আইনে চাঁদাবাজি বলতে ২(খ)-এর (অ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়া বা বেআইনি বল প্রয়োগ করিয়া কোনো ব্যক্তি বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে চাঁদা, সাহায্য বা অন্য কোনো নামে অর্থ বা মালামাল দাবি, আদায় বা অর্জন করা বা অন্য কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা আদায় করা বা আদায়ের চেষ্টা করা’; শাস্তির পরিমাণ অনধিক পাঁচ বছর, অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ড তদুপরি অর্থদণ্ড রয়েছে।
অন্যদিকে দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বলপূর্বক গ্রহণের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিকে ক্ষতির ভীতি প্রদর্শন করে বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো আঘাতজনিত ক্ষতির ভীতি প্রদর্শনের উদ্যোগ করে, সেই ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যাহার মেয়াদ ১৪ বৎসর, তবে পাঁচ বৎসরের কম নহে।’ একই সঙ্গে ৩৮৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘একই উদ্দেশ্যে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের ভয় দেখালে বা দেখাবার উদ্যোগ করলে সাজার মেয়াদ হবে যাবজ্জীবন, তবে সাত বছরের কম নয়।’ প্রথম উল্লিখিত দ্রুত বিচার আইনটি বিশেষ আইন। অপরিহার্য মনে করে ২০০২ সালে দুই বছরের জন্য প্রবর্তন করে ক্রমান্বয়ে মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। দণ্ডবিধির ৩৮৫ ও ৩৮৭ ধারা হচ্ছে সাধারণ আইন। ১৯৯১ সালে দণ্ডবিধির এ দুই ধারার দণ্ডের পরিমাণে পরিবর্তন আনা হয়। আগে ৩৮৫ ধারায় দুই বছর এবং ৩৮৭ ধারায় সাত বছরের দণ্ডের বিধান ছিল। শাস্তির পরিমাণে পরিবর্তন এনে ধারা দুটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের তফসিলের ৪(সি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ৪(সি)তে আগে ছিল শুধু ৩৭৬ ধারা, অর্থাৎ ধর্ষণের অপরাধের শাস্তির ধারা। ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন প্রবর্তন করে বিশেষ আদালতের জন্ম দিয়ে জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে হোক বিশেষ ক্ষমতা আইন সংশোধন করে ৩৭৬ ধারার কারণে তফসিলের পুরো ৪(সি) বাতিল করায় ৩৮৫ ও ৩৮৭ ধারা এতিম হয়ে যায়। এ দুই ধারা বিচারের কোনো আদালত দৃশ্যমান থাকেনি। অবস্থা দাঁড়ায়, আইন আছে, আদালত নেই। এভাবে পাঁচ বছর চলার পর ২০০০ সালের ৪১ নম্বর আইন দ্বারা ধারা দুটির বিচারের স্থান দায়রা জজ আদালত নির্ধারণ করা হয়।
২০০২ সাল থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে উভয় আইনেই দেশজুড়ে মামলা হচ্ছে। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে আইন দুটির অসংগতি হলো, দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলার শাস্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত এবং দুই বছরের কম নয়। মামলা নিষ্ফল হলে একই আইনের ৬ ধারাবলে পাল্টা মামলায় সমান শাস্তি পেতে হবে মামলা দায়েরকারী ও সাক্ষীদের।
অন্যদিকে দণ্ডবিধির ৩৮৫ ও ৩৮৭ ধারার অতিভারী মামলা নিষ্ফল হলেও সরাসরি পাল্টা মামলা সৃষ্টির কোনো বিধান নেই। রয়েছে দণ্ডবিধির অন্য ১০টি মিথ্যা মামলার মতো ২১১ ধারার মামলার জটিল প্রক্রিয়া। এ কারণে ৩৮৫ ধারা ও ৩৮৭ ধারার মিথ্যা মামলায় দেশ ছেয়ে গেছে। মৌখিকভাবে ক্ষতির ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করার একটা জুৎসই গল্প সাজাতে পারলেই ১৪ বছরের শাস্তিযোগ্য মামলা দেওয়া যায়। পুলিশকে তৎপর করা যায়। ২০০৭ সালে এ ধারাটিকে জরুরি বিধিভুক্ত করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ ধারার শক্তি আরও বেড়ে গিয়েছিল। আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার জন্য দণ্ডবিধির ৩৬৪ ধারা ও ৪৩৬ ধারার প্রয়োগ হতো বেশি, এখন প্রয়োগ হচ্ছে ৩৮৫ ধারা। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রবণতা রোধে এবং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় দণ্ডবিধির ৩৮৫ ও ৩৮৭ ধারার মামলা নিষ্ফল হলে ৩৮৫এ ও ৩৮৭এ ধারা সৃষ্টি করে সমান শাস্তিযোগ্য পাল্টা মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূচনার পথ করে সংশোধনী আনয়ন করা দরকার।
আমাদের দেশে ব্যতিক্রম ব্যতীত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নানা কারণে দায়িত্ব পালনে আশানুরূপ আন্তরিক নন। তাঁদের দায়িত্ব পালনে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ সন্দেহমুক্তভাবে ভরসা খুঁজে পান না। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে ২০০০ সালে প্রবর্তিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে, জননিরাপত্তা আইনে এবং ২০০২ সালের এসিড অপরাধ দমন আইনে অভিযোগকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনাকারীকে আইনগতভাবে পাবলিক প্রসিকিউটরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। শুরুতে ১৯৫৮ সালের ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের ৬(১) ধারাতে বিধানটির উল্লেখ ছিল এরূপ, A person conducting prosecution before the court of a special judge shall be deemed to be a public prosecutor. কিন্তু ১৯৮৯ সালের ৩ নম্বর অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ অতি প্রয়োজনীয় অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩৩ নম্বর ধারায় কমিশনের নিজস্ব পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করে প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের কথা বলা আছে। দুর্নীতি দমন আইন চর্চা খাঁচাবন্দী না করে জনস্বার্থে ১৯৮৯ সালে ৬(১) ধারার বাদ দেওয়া অংশটুকু বাস্তবতার আলোকে পুনরায় যুক্ত করা দরকার।
অনুমান করা হয় যে, তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত মিশর ও চিন দেশেও ধর্ম-নিরপেক্ষ আইনের প্রচলন কিছুটা ছিল। অন্য পক্ষে পুরনো যুগে হিন্দু, ইহুদি, খ্রিশ্চান ও মুসলিম সমাজের আইনের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বেদ-উপনিষদ, বাইবেল ও কোরানের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বাইবেলের ‘টেন কমান্ডমেণ্ট’-এর সঙ্গে যে সব আইনের কথা লেখা হয়েছিল, সেগুলিতে শাস্তির বহরও অনেকটা হামুরাবির বিধানের মতোই কঠোর, যাকে অনেক সময় বলা হয় ‘আই ফোর অ্যান আই, টুথ ফর অ্যা টুথ’ (চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত) জাতীয় চিন্তাধারা-প্রসূত।
সময়ের সাথে সাথে আইন ও বিচার ব্যবস্থায় বহু পরিবর্তন এসেছে। এ এক নিরন্তর বিকাশশীল বিষয়।
অদ্ভুত বিচার ব্যবস্থা
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বেশ অদ্ভুত। ১৯৭২ সালে ষোলই ডিসেম্বর যে সংবিধানকে আমরা মাতৃভূমির পিতা বলিয়া মানিয়া লইলাম সেইখানে লেখা ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের একটি বিচার বিভাগ থাকিবে, যাহা হইবে স্বাধীন। সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ ছাড়া বিচারপতিদের অপসারণ করা যাইবে না। এইসব নানা বিষয় সংবিধানে যুক্ত করা হয় যেন বাংলাদেশের ভুদাইগন ন্যায়বিচার পাইতে পারে। কিন্তু কার্যত কি হইল, বিচারবিভাগ নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকিল। আর আমরা এমন এক বিচার ব্যবস্থা পাইলাম যাহার ফলে বিচারকগন বাংলাদেশের ভুদাইগোর চাইতেও বেশি ভুদাই হইয়া গেল। নির্যাতিত মানুষ যেহেতু স্বাধীনতা চায় সেহেতু বিচারপতিগণ বিচারবিভাগের জন্য স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাপাইয়া পড়িলেন। মামলা হইলো, সুপ্রীম কোর্ট বিচার বিভাগ স্বাধীন করবার লাইগা সরকাররে ফাপর দিল, ফলে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা সময়ের ব্যাপারে পরিণত হইলো। একই সময়ে শেখ মুজিব ও জেনারেল জিয়া পরিবারের প্রাধান্য লইয়া কিছু চালাক জনগণ মারামারিতে লিপ্ত, আর তখনই আগাইয়া আসিলো দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। মহান দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তখন আবারও উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হইলেন। কিন্তু জেনারেল মইন কিন্তু জেনারেল এরশাদ হইতে পারিলেন না। তার কারণ বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ততদিনে তাদের পেশাদারিত্বের খোলস ফেলিয়া দিয়া ব্যবসায়ী ও আদম ব্যাপারীতে পরিনত হইয়াছে। জেনারেল মইন ও তার গুরু জেনারেল মাসুদ (যদিও পরে গুরু ল্যাঙ খাইয়া যায়) জনগণকেও রক্ষা করলেন আবার তাদের আদমব্যাবসাও ঠিক রাখিলেন। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের রক্ষিতা গর্ভনর ফকরুদ্দিনকে মুকুট পরাইলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকে সুশীল সমাজের হাতে তুলিয়া দেয়ার খায়েশ তাহাদের ছিল। এই লক্ষে তাহারা নানা কর্ম সম্পাদন করে। কিন্তু +- ফর্মুলা খাটাইয়া দুই পরিবারের দুই প্রধানকে সরাইয়া দিতে গিয়া জেনারেল মইন,জেনারেল মাসুদ ও ফখরুদ্দিন দেখিলেন কাজটা সহজ না। উলটো তাহারা মাইনকা চিপায় পতিত হইলেন। এবং এর সাথে এই কথাও আমাদের সামনে দিয়া গেলেন যে এই দুই পরিবারের বিকল্প নাই। তো এইরকম সময়ে কোন এক বিয়ানবেলায় আমরা জানিতে পারিলাম এক নির্বাহী আদেশবলে নির্বাহী বিভাগ ও বিচারবিভাগের বন্ধন ছিন্ন হইয়াছে। বিচারবিভাগ তার কাংখিত স্বাধীনতা লাভ করিয়াছে। কি স্বাধীনতা বিচার বিভাগ ভোগ করিতেছে? দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মাধ্যমে জানিতে পারিলাম যে সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের পাঁচজন সম্মানিত বিচারক টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক এর মাজার পরিদর্শন করিয়াছেন। ইহাতে কোন আপত্তি নাই। আপত্তি ইহাতেও থাকত না যদি তাহারা এই পরিচয়ে যাইতেন যে তাহারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিচারবিভাগ শাখার নেতা। কিন্তু তাহারা গিয়াছেন বিচারপতির পরিচয়ে, সাথে করিয়া লইয়া গিয়াছেন একপাল আওয়ামী শুয়োর। যেন দলের কাছে দলের প্রতি তাদের আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রমান দেওয়াই তাহাদের লক্ষ্য। যেন তাহাদের সকল দ্বায়বদ্ধতা আওয়ামী লীগের প্রতি। কিন্তু তাহাদের আসলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকিবার কথা ছিল। বিচারবিভাগ স্বাধীন হওয়ার আগেও বিচারকদের নামে দলপ্রীতির অভিযোগ ছিল। কিন্তু তা এতটা প্রকট ছিল না। তখন শোনা যায়নি যে একপাল বিচারক অমুক করিতেছেন তমুক করিতেছেন, তাহারা শ্রদ্ধাবিতরণ করিতেছেন। বিচারবিভাগ স্বাধীন হইবার আগে বিচারকরা দলবাজী করতেন একটা মুখোশ পইরা, আর এখন বিচারকরা দলবাজি করতাছেন মালকোচা মাইরা। মহান দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের রাজনীতি ধ্বংসের যে চক্রান্তে লিপ্ত হইয়াছিল বিচারবিভাগ স্বাধীন করার সিদ্ধান্ত ছিল তার অন্যতম বিষয় বইলাই আমার মনে হয়। বিচারবিভাগ কার্যত স্বাধীন কইরা তারা অস্ত্র দ্বারা তা নিয়ন্ত্রণ করতেছিল। এর ফলে বিচারবিভাগে গোলামী অভ্যাসে পরিণত হইয়াছিল। যা আওয়ামীলীগ আমলেও যাইতে পারে নাই। যেহেতু বিচারকরাও বুঝে গিয়েছিলেন যে বাংলাদেশে এই দুইদলের বিকল্প কিছু নাই, ফলে তারাও নিজেদের সুবিধার লাইগা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে শান্তির আবাস গড়িতে চাইলেন। বাংলাদেশের বিচারকরা সংবিধান সংশোধন বাতিল করতাছেন। কোন সংবিধানগুলা বাতিল করতাছেন? সেই সমস্ত সংশোধন যার রায় আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়। সামনে বি.এন.পি আসবে। তাদের পতাকাতলের বিচারকরা তাদের পছন্দ মতো সংশোধন বাতিল বলিয়া রায় দিবে। কিন্তু যে সংশোধনের মাধ্যমে বেরুবাড়ি ভারতের কাছে হস্তান্তর কিংবা দেশে জরুরী অবস্থা জারি তা কিন্তু বাতিল হইবে না। তো, এই হইলো বিচারবিভাগের স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতা দ্বারা বিচারবিভাগ আরো দলবাজীতে যুক্ত হইলো। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা আসলে এই ব্যবস্থায় সম্ভব না। এই ব্যবস্থায় বিচারবিভাগের স্বাধীনতা একটা ভ্রান্ত ধারণা। এদেশে একটা সুবিধাভোগী শ্রেনীই শুধুমাত্র এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যুক্ত হইতে পারে। তাহাদের সাথে সাধারন মানুষের কোনোই যোগাযোগ নাই। তাহারা সাধারন মানুষ চিনে না। সাধারণ মানুষের সাথে তাহাদের পরিচয় নাই। ফলে তাহাদের কাছ থিকা দলবাজি ব্যতীত আর কিবা আশা করিবার থাকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই দল ব্যতীত কোন উপায় নাই এইটার সাথে আরো দুইটা বিষয় আমাদের সামনে উন্মোচন কইরাছেন। তাহা হইলো এইদেশে জনগণের রাজনীতি ততটা প্রবল হয় নাই(আমি মনে করি, এই দুই পারিবারিক দল ও তাদের জোট জনগণের শত্রু)। আর একটা হইলো জনগণের রাজনীতির সুযোগ আছে। এই সময়ে দরকার জনগণের রাজনীতিকে বিকশিত করা। এবং জনগনের সরকার কায়েম করবার মধ্য দিয়া জনগণের মুক্তি আদায় করা। তাইলেই শুধুমাত্র বিচারবিভাগ কিংবা জনগন সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন হইবার উপায় থাকে। অন্যথায় বিন্দুমাত্র সম্ভাবন অবশিষ্ট থাকিবে না।
আইনের যত অসংগতি
চাঁদা দাবির অপরাধের জন্য দুই ধরনের বিচার-প্রক্রিয়া বিদ্যমান আছে। একটি প্রক্রিয়া দণ্ডবিধির আওতায় দায়রা জজ আদালতের এখতিয়ারাধীন, অপরটি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২-এর আওতায় বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার্য। ২০০২ সালের ১১ নম্বর আইনে চাঁদাবাজি বলতে ২(খ)-এর (অ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়া বা বেআইনি বল প্রয়োগ করিয়া কোনো ব্যক্তি বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে চাঁদা, সাহায্য বা অন্য কোনো নামে অর্থ বা মালামাল দাবি, আদায় বা অর্জন করা বা অন্য কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা আদায় করা বা আদায়ের চেষ্টা করা’; শাস্তির পরিমাণ অনধিক পাঁচ বছর, অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ড তদুপরি অর্থদণ্ড রয়েছে।
অন্যদিকে দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বলপূর্বক গ্রহণের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিকে ক্ষতির ভীতি প্রদর্শন করে বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো আঘাতজনিত ক্ষতির ভীতি প্রদর্শনের উদ্যোগ করে, সেই ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যাহার মেয়াদ ১৪ বৎসর, তবে পাঁচ বৎসরের কম নহে।’ একই সঙ্গে ৩৮৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘একই উদ্দেশ্যে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের ভয় দেখালে বা দেখাবার উদ্যোগ করলে সাজার মেয়াদ হবে যাবজ্জীবন, তবে সাত বছরের কম নয়।’ প্রথম উল্লিখিত দ্রুত বিচার আইনটি বিশেষ আইন। অপরিহার্য মনে করে ২০০২ সালে দুই বছরের জন্য প্রবর্তন করে ক্রমান্বয়ে মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। দণ্ডবিধির ৩৮৫ ও ৩৮৭ ধারা হচ্ছে সাধারণ আইন। ১৯৯১ সালে দণ্ডবিধির এ দুই ধারার দণ্ডের পরিমাণে পরিবর্তন আনা হয়। আগে ৩৮৫ ধারায় দুই বছর এবং ৩৮৭ ধারায় সাত বছরের দণ্ডের বিধান ছিল। শাস্তির পরিমাণে পরিবর্তন এনে ধারা দুটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের তফসিলের ৪(সি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ৪(সি)তে আগে ছিল শুধু ৩৭৬ ধারা, অর্থাৎ ধর্ষণের অপরাধের শাস্তির ধারা। ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন প্রবর্তন করে বিশেষ আদালতের জন্ম দিয়ে জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে হোক বিশেষ ক্ষমতা আইন সংশোধন করে ৩৭৬ ধারার কারণে তফসিলের পুরো ৪(সি) বাতিল করায় ৩৮৫ ও ৩৮৭ ধারা এতিম হয়ে যায়। এ দুই ধারা বিচারের কোনো আদালত দৃশ্যমান থাকেনি। অবস্থা দাঁড়ায়, আইন আছে, আদালত নেই। এভাবে পাঁচ বছর চলার পর ২০০০ সালের ৪১ নম্বর আইন দ্বারা ধারা দুটির বিচারের স্থান দায়রা জজ আদালত নির্ধারণ করা হয়।
২০০২ সাল থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে উভয় আইনেই দেশজুড়ে মামলা হচ্ছে। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে আইন দুটির অসংগতি হলো, দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলার শাস্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত এবং দুই বছরের কম নয়। মামলা নিষ্ফল হলে একই আইনের ৬ ধারাবলে পাল্টা মামলায় সমান শাস্তি পেতে হবে মামলা দায়েরকারী ও সাক্ষীদের।
অন্যদিকে দণ্ডবিধির ৩৮৫ ও ৩৮৭ ধারার অতিভারী মামলা নিষ্ফল হলেও সরাসরি পাল্টা মামলা সৃষ্টির কোনো বিধান নেই। রয়েছে দণ্ডবিধির অন্য ১০টি মিথ্যা মামলার মতো ২১১ ধারার মামলার জটিল প্রক্রিয়া। এ কারণে ৩৮৫ ধারা ও ৩৮৭ ধারার মিথ্যা মামলায় দেশ ছেয়ে গেছে। মৌখিকভাবে ক্ষতির ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করার একটা জুৎসই গল্প সাজাতে পারলেই ১৪ বছরের শাস্তিযোগ্য মামলা দেওয়া যায়। পুলিশকে তৎপর করা যায়। ২০০৭ সালে এ ধারাটিকে জরুরি বিধিভুক্ত করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ ধারার শক্তি আরও বেড়ে গিয়েছিল। আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার জন্য দণ্ডবিধির ৩৬৪ ধারা ও ৪৩৬ ধারার প্রয়োগ হতো বেশি, এখন প্রয়োগ হচ্ছে ৩৮৫ ধারা। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রবণতা রোধে এবং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় দণ্ডবিধির ৩৮৫ ও ৩৮৭ ধারার মামলা নিষ্ফল হলে ৩৮৫এ ও ৩৮৭এ ধারা সৃষ্টি করে সমান শাস্তিযোগ্য পাল্টা মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূচনার পথ করে সংশোধনী আনয়ন করা দরকার।
আমাদের দেশে ব্যতিক্রম ব্যতীত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নানা কারণে দায়িত্ব পালনে আশানুরূপ আন্তরিক নন। তাঁদের দায়িত্ব পালনে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ সন্দেহমুক্তভাবে ভরসা খুঁজে পান না। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে ২০০০ সালে প্রবর্তিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে, জননিরাপত্তা আইনে এবং ২০০২ সালের এসিড অপরাধ দমন আইনে অভিযোগকারীর পক্ষে মামলা পরিচালনাকারীকে আইনগতভাবে পাবলিক প্রসিকিউটরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। শুরুতে ১৯৫৮ সালের ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের ৬(১) ধারাতে বিধানটির উল্লেখ ছিল এরূপ, A person conducting prosecution before the court of a special judge shall be deemed to be a public prosecutor. কিন্তু ১৯৮৯ সালের ৩ নম্বর অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ অতি প্রয়োজনীয় অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩৩ নম্বর ধারায় কমিশনের নিজস্ব পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করে প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের কথা বলা আছে। দুর্নীতি দমন আইন চর্চা খাঁচাবন্দী না করে জনস্বার্থে ১৯৮৯ সালে ৬(১) ধারার বাদ দেওয়া অংশটুকু বাস্তবতার আলোকে পুনরায় যুক্ত করা দরকার।
Comments
Post a Comment