বিয়ে নিয়ে যত কথা!

বিয়ে নিয়ে যত কথা!
 পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে, সেসবের মধ্যে একমাত্র মানুষ ছাড়া অন্য সবক্ষেত্রে পুরুষই সুন্দর। যেমন ধরুন, মোরগ-মুরগি, মোরগ সুন্দর। ষাঁড়-গাভি, ষাঁড় সুন্দর। সিংহ-সিংহী, সিংহ সুন্দর। ময়ুর-ময়ুরী, ময়ুর সুন্দর। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। পুরুষের চেয়ে নারী সুন্দর।

আবার দেখুন, ওইসব প্রাণীর ক্ষেত্রে, যেমন- সিংহ কেশর নেড়ে, মোরগ ঝুঁটি নেড়ে, ময়ুর পেখম মেলে, বা ষাঁড় গলকম্বল নেড়ে সঙ্গিনীকে আকর্ষণ করে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে পুরুষ কী দিয়ে আকর্ষণ করবে? নচিকেতা এর উত্তর দিয়েছেন এভাবে- “অ্যাই, তুমি চুপ করে ভাবো কার কথা? প্রেম?/আরে, মোটা মানিব্যাগ দেখে/ তোমাকে সাইডে রেখে/দৌড়োবে সোজা, সোজা দৌড়েোবে প্রেম।”

ধরুন, আপনার ‘মোটা মানিব্যাগ’ হলো, বিয়েও করলেন। কিন্তু ঝামেলা কি শেষ হলো? আমাদের দেশীয় প্রবাদটির প্রসঙ্গেই আসা যাক-

‘যখন আছে দুই পাও, যেথা খুশি সেথা যাও
যখন হবে চার পাও, ভাত-কাপড় দিয়া যাও
যখন হবে ছয় পাও, বাবা তুমি কোথা যাও?’

আবার, এই দুই বন্ধুর কথোপকথন দেখুন:

প্রথম বন্ধু: দোস্ত, মনটা ভীষণ খারাপ।
দ্বিতীয় বন্ধু: কেন?
প্রথম বন্ধু: বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। সাতদিন কথা বন্ধ।
দ্বিতীয় বন্ধু: গুড নিউজ!
প্রথম বন্ধু: আরে, আজকে তো শেষ দিন!

কালকে থেকে বউয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে বলে প্রথম বন্ধুর মন খারাপ। তার মানে কি বিয়ে কোনো বাড়তি ঝামেলা? ‘নট অল মেন আর ফুলস, সাম আর ব্যাচেলরস’- এমন লেখা একটি গেঞ্জি মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর সিনেমায় দেখা গেছে। পরে অনেক তরুণই অবশ্য সেই লেখা সম্বলিত গেঞ্জি পরে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

নচিকেতার গানে  আছে, ‘আপনি জীবিত, না বিবাহিত?’ এটা ভেবেই হোক, আর না ভেবেই হোক, অনেক বড় বড় ব্যক্তিই কিন্তু অবিবাহিত ছিলেন। গ্যালিলিও, ডেকার্ট, ক্যাভেন্ডিস, হিউম, মেকলে, জেরেমি বেনথাম, রাজনীতি বিশারদ পিট ফক্স, চিত্রকর র‌্যাফেলো, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, জন মিল্টন।

তাদের বিয়ে না করার কারণ কতটা যু্ক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে বিয়ে না করার ব্যাপারে চিত্রকর রেনলডস-এর ধারণা ভুল ছিল। তার এক চিত্রকর বন্ধুকে বিয়ে করতে দেখে তিনি আঁতকে উঠেছিলেন। তার ধারণা ছিল, বাস্তব সুন্দরীর সংস্পর্শে যদি কল্পনা সুন্দরী হারিযে যায়! কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

সক্রেটিসের কথা ধরুন। তিনি নাকি তার এক পরিচিতজনকে বলেছিলেন, “কিছু হোক আর না হোক, বিয়েটা করো।”

কিন্তু বাস্তবে সক্রেটিস নিজেই দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিলেন না। তাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “দেখো, যদি বউ ভালো হয়, তাহলে তুমি সুখী হবে। আর যদি বউ যুঁতসই না হয়, তাহলে তুমি আমার মতো দার্শনিক হবে। মন্দ কী?”

যাহোক, ভালো-মন্দের হিসাব করাটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। অন্ততপক্ষে বিয়ের ব্যাপারে এতকিছু হিসাবের বিপক্ষে অনেকেই। চলুন এবার তবে, এই বৃদ্ধের ঘটনা দেখি।

বৃদ্ধ মৃত্যুশয্যায়। তার আশপাশে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, নাতি-নাতনি সবাই। একপর্যায়ে তিনি তার ছোট ছেলের হাত ধরে বললেন, “বাবা, যাবার বেলায় একটা কথা বলি। রাখবি?” ছেলে বলল, “হ্যাঁ, বাবা, বলো।” বৃদ্ধ বললেন, “জীবনে যা-ই কর, বিয়ে করিস না। বিয়ে করলে অনেক ঝামেলা। মাথা-মুণ্ডু সব নষ্ট হয়ে যাবে। আর এসবের কারণে আমার মতো তোকেও অকালে মরতে হবে। তা-ই বলি, বিয়ে করিস না। আমার বাবা, মানে তোর দাদা তার মৃত্যুর আগে আমাকে এই উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি, ভুল করেছি। কিন্তু তুই আমার কথা রাখিস বাবা।”

ছেলে বলল, “বাবা, তোমার কথা রাখব। তবে আমি আমার ছেলেকেও এই উপদেশ দিয়েই যাব।”

তার মানে, কী বুঝলেন? বিয়ের ব্যাপারে ‘নো কমপ্রোমাইস’। কারণ কবিগুরু তো বলেই দিয়েছেন, ‘চলিতেছে এমনই অনাদিকাল হতে…’। কিন্তু তার এ কথাও আমলে নেয়া জরুরি- ‘মানুষের একটা বয়স আছে, যখন সে চিন্তা না করেও বিবাহ করতে পারে। সে বয়স পেরোলে বিবাহ করতে দুঃসাহসিকতার দরকার হয়।’

Comments

Popular posts from this blog

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা