স্বামী তার স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণ দিতে আইনত বাধ্য

স্বামী তার স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণ দিতে আইনত বাধ্য

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী ভরণপোষণ বলতে জীবিকা নির্বাহের জন্য খাওয়া, পরা ও থাকার সংস্থানকে বুঝায়। মাঝে মাঝে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করাকে ভরণপোষণ বলে না। শুধুমাত্র খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান হলেই ভরণপোষণ সংজ্ঞাটি সম্পূর্ণ নয়। শিক্ষার খরচ এবং শরীর ও মানসিক পুষ্টির জন্য যাবতীয় বিষয়ও এই সংজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত হবে।

ভরণপোষণের শর্ত
১.স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। স্ত্রীও ভরণপোষণ পেতে হকদার।
২.স্বামী যদি স্ত্রীর সঙ্গে অভ্যাসগতভাবে খারাপ ব্যবহার করে, গৃহত্যাগের নির্দেশ দেয়, তাড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করে থাকে অথবা তাদের মধ্যেকার আচার আচরণ এরুপ পর্যায়ে পৌঁছায় যে, এটা নিরসন করা সম্ভব নয় বা স্বামীর গৃহে থাকলে আরও অসুবিধা এবং বিরোধের জন্ম দিবে, সে অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে বসবাস না করেও খোরপোষ দাবি করতে পারে।
৩.স্ত্রী তার আশু দেনমোহর দাবি করলে উক্ত দেনমোহর স্বামী পরিশোধ না করলে স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে পৃথক বসবাস করতে থাকলেও স্বামী তার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে।

ভরণপোষণ পরিশোধের নিয়ম
১. ৯ ধারার বিধান অনুসারে সালিশী পরিষদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে উপযুক্ত খোরপোষ উল্লে¬খ করে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে।
২. বিবাহ যতদিন বলবৎ থাকবে, ততদিনই স্বামী খোরপোষ দিতে বাধ্য থাকবে।
৩.খোরপোষের পরিমাণ নির্ধারণ করার সময় সালিশী পরিষদ স্ত্রীর পরিবারের সামাজিক পদমর্যাদা, স্বামীর উপার্জন এবং অন্যান্য বিষয়াবলীও বিবেচনা করে খোরপোষের পরিমাণ নির্ধারণ করবে।
৪. স্ত্রীকে এমন পরিমাণ খোরপোষ মঞ্জুর করতে হবে যা দ্বারা স্ত্রী ঠিকমত জীবন-যাপন করতে পারে।

ভরণপোষণ আদায় ও স্থানীয় সালিশী পরিষদের ভুমিকা
১. কোনো স্বামী তার স্ত্রী/স্ত্রীগনকে সমান খোরপোষ না দিলে স্ত্রী/স্ত্রীগন ভরণপোষণ আদায়ের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে পারবে। চেয়ারম্যান বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবে। উক্ত সালিশী পরিষদ স্বামী কর্তৃক খোরপোষ হিসাবে দেয় টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করতঃ একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করতে পারবে। স্বামী অথবা স্ত্রী নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটটি পুনঃবিবেচনার উদ্দেশ্যে সহকারী জজের নিকট আবেদন করতে পারবে এবং এক্ষেত্রে সংশ্লি¬ষ্ট সহকারী জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং এর বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
২. উপরোক্ত রুপে দেয় কোন অর্থ যথাসময়ে প্রদান করা না হয়ে থাকলে এটা বকেয়া রাজস্বের আকারে আদায়যোগ্য হবে।
৩. উপরোক্ত কোন শর্ত ভঙ্গ করলে, চেয়ারম্যান কর্তৃক সালিশী পরিষদের সিদ্ধান্ত না মানলে এবং আদালতের নিয়ম নির্দেশ অমান্য করলে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নিতে পারে।

সন্তানের ভরণপোষণ ও অভিভাবকত্ব
মুসলিম আইন ও রাষ্টীয় আইন অনুসারে পিতাই সন্তানের প্রকৃত অভিভাবক। তাই সন্তানের ভরণপোষণের সমস্ত দায়-দায়িত্ব হচ্ছে বাবার।
ক) সাবালক প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পিতা তার ছেলে-মেয়েদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
খ) তালাক বা বিচ্ছেদের পর সন্তান যদি মায়ের কাছে থাকে, তবুও বাবাই ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে ছেলে ৭ বৎসর এবং মেয়ের বিবাহ হওয়া পর্যন্ত। উল্লেখ্য যে, মেয়ের বিয়ের খরচও বাবাকেই দিতে হবে।
গ) যদি কোন সাবালক সন্তান অসুস্থতার জন্য কিংবা পঙ্গুত্বের জন্য রোজগার করতে না পারে, তবে বাবা তাকে আজীবন ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
ঘ) পিতা-মাতা গরীব বা দৈহিকভাবে অসমর্থ হলে দাদার অবস্থা সচ্ছল হলে ওই সকল ছেলে-মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব দাদার উপর ন্যস্ত হবে।
ঙ) সন্তানদের অভিভাবক বাবা, মা সন্তানের জিম্মাদার ও হেফাজতকারী হিসাবে ভুমিকা পালন করবে।
চ) মা সন্তানের লালন পালনকারী। মায়ের দায়িত্ব সন্তানদের দেখাশুনা করা। সন্তানেরা মায়ের কাছে থাকবে এবং বাবা সমস্ত খরচ বহন করবে।
ছ) মুসলিম আইনে বাবা তার দায়িত্ব পালন না করলে অভিভাবকত্বের দাবি করতে পারবে না। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরও সন্তানেরা মায়ের কাছে থাকতে পারবে।

মা কখন সন্তানের জিম্মাদার থাকতে পারবে না 
১. মা অসৎ জীবন যাপন করলে।
২. মা এমন কাউকে বিয়ে করলে যার সঙ্গে তার নিজের কন্যার বিয়ে হওয়ার ব্যাপারে ধর্মীয় নিষেধ নেই।
৩. সন্তানের প্রতি উদাসীন, দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে

Comments

Popular posts from this blog

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা