আমাদের শিক্ষার মান নিয়ে কি তারপরেও প্রশ্ন জাগবেনা?দেখুন আমাদের শিক্ষক এর সঠিক অনুভব।
- Get link
- X
- Other Apps
জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা নিদারুণভাবে অযোগ্য!
শেখ হাফিজুর রহমান | সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি খবর দেখে মর্মাহত হলাম। চমকে উঠিনি বা বিস্ময়ে হতবাকও হইনি; কেননা, এ বিষয়ের হাঁড়ির খবর আগে থেকেই জানা ছিল এবং এ বিষয়ে আগে থেকেই আমার মধ্যে প্রবল শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা ছিল। খবরটি হচ্ছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—উভয় পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পাওয়া বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর পাচ্ছেন না। ওই প্রতিবেদনে যে সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক, মর্মান্তিক এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য আশঙ্কাজনক। ওই প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, এ বছর স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষে ক, খ ও গ ইউনিটে জিপিএ-৫ পাওয়া ৪৪ হাজার ৬৪২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৯ হাজার ৮৬৮ জন বা প্রায় ৪৫ শতাংশ। বাকি ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণই হতে পারেননি। ২০১০ ও ২০১১ সালে এই অনুত্তীর্ণের হার ছিল যথাক্রমে ৫২ ও ৫৩ শতাংশ। ভাবুন তো একবার, জিপিএ-৫ পাওয়া ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বরই পাননি। শিক্ষার মানের বিচারে বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি সংবাদ।
মনে পড়ছে ২০১২ সালের ১৯ জুলাইয়ের পত্রিকাগুলোর কথা। তার আগের দিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সব পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় হাস্যোজ্জ্বল শিক্ষার্থীদের মুখের ছবি। মুখগুলো আনন্দে উচ্ছ্বসিত, চোখে নতুন সম্ভাবনা এবং পদক্ষেপে সামনে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয়। উচ্ছ্বাসে ভরা কচি কচি মুখগুলো দেখে ভালোই লাগছিল। কিন্তু ফলাফল বিশ্লেষণ করে এবং নম্বর দেওয়ার পেছনের ইতিবৃত্ত জেনে চমকে উঠেছিলাম।
২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (জিপিএ-৫) পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রথমবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন মাত্র ২০ জন শিক্ষার্থী। এর নয় বছর পর ২০১২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫১ হাজার ৪৬৯ জন শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ দেখে এবং বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়া দেখে অনেকের মনে হতে পারে যে, উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনাটা ভালোই হচ্ছে! কিন্তু আসল সত্যটা যে অত্যন্ত হূদয়বিদারক, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হই যখন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৫৫ শতাংশ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী উত্তীর্ণই হতে পারেন না।
গড় পাসের হার ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়া দেখার পর হাঁড়ির খবরটি জানার জন্য আমি বেশ কয়েকজন কলেজশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা আমাকে জানান, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ের খাতা দেওয়ার সময় শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে শিক্ষকদের লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনায় উদারভাবে নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা থাকে। নির্দেশনায় এমন কথাও বলা থাকে যে, শিক্ষার্থী ভুল-শুদ্ধ যা-ই লিখুক না কেন, তাকে নম্বর দিতেই হবে। আর নম্বর দিতে হবে বাড়িয়ে বাড়িয়ে। যে শিক্ষার্থী পাস নম্বর পাওয়ার যোগ্য নন, তাঁকে পাস নম্বর বা তার অধিক নম্বর দিতে হবে। আর বাড়িয়ে বাড়িয়ে নম্বর দেওয়ার ফলে যে শিক্ষার্থী ৫০ নম্বর পাওয়ার যোগ্য, তিনি পেয়ে যান ৬০, ৬৫, ৭০ বা তার অধিক। নম্বর দেওয়ার বেলায় উদার নীতিমালা অনুসরণ করার ফলে কৃত্রিমভাবে মেধার বিস্ফোরণ ঘটে। উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে আমরা দেখতে পাই, হাজার হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখতে পাই, জিপিএ-৫, গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বা বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হতে পারেন না।
একজন শিক্ষার্থী হয়তো ৫০ অথবা ৬০ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বাড়িয়ে বাড়িয়ে নম্বর দেওয়ার ফলে তিনি হয়তো জিপিএ-৫ পেয়ে গেলেন। এতে ফলাফলে শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধা ও মানের প্রতিফলন হলো না। ফলাফলে ওই শিক্ষার্থী হয়তো জিপিএ-৫ পেয়ে গেলেন, কিন্তু এতে তাঁর ভাষার দুর্বলতাও কাটল না বা তাঁর বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের অগভীরতাও দূর হলো না। ভাষার দুর্বল ভিত্তি এবং বিষয়ভিত্তিক অগভীর জ্ঞান নিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া একজন শিক্ষার্থী যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় নেন, তখনই তাঁর অযোগ্যতা ফাঁস হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বা বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় তো আর বাড়িয়ে বাড়িয়ে নম্বর দেওয়া হয় না, যে শিক্ষার্থী যে নম্বরের যোগ্য, তাঁকে সেই নম্বরই দেওয়া হয়। এতে করে দেখা যায়, জিপিএ-৫ পাওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিদারুণভাবে অযোগ্য!
গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মনে হয়েছে, জিপিএ-৫ পাওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ভাষার ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান খুবই অগভীর এবং পড়াশোনার প্রতি ‘সিরিয়াসনেস’ হতাশাজনক। এই জেনারেশনকে আমি অনেক সময় ‘কোচিং সেন্টার জেনারেশন’ বা ‘এমসিকিউ জেনারেশন’ বা ‘মোবাইল ফোন’ জেনারেশন বলে থাকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের গড়পড়তা মান নিয়ে আমি দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছি। আইনে স্নাতক সম্মান চালু হওয়ার পর থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই বিভাগে ভর্তি হয়ে আসছেন। এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের মাধ্যমে যাঁরা ভর্তি হন, তাঁদের মধ্যে আইন, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য মেধাতালিকায় যাঁরা প্রথম দিকে থাকেন, তাঁদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ দেখা যায়। এ রকম একটি ভর্তি-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভর্তি হয়ে আসার পরও দেখি, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের গড়পড়তা মান আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের অবস্থা যে এর চেয়ে ভালো, তা-ও নয়।
মূলত শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে যে আশঙ্কাজনক অধঃপতন হয়েছে, তার জন্য সামগ্রিক ব্যবস্থাটাই দায়ী। স্কুল-কলেজে ভাষা বিষয়ে যথাযথ শিক্ষা না দেওয়া, বিষয়ভিত্তিক গভীর পাঠদান ও পাঠাভ্যাসের অনুপস্থিতি, পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিষয়ে পাঠাভ্যাস কমে যাওয়া, ‘শর্টকাট’ উপায়ে সফল হওয়ার প্রবণতা, কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভরশীলতা, বাড়িয়ে বাড়িয়ে নম্বর দিয়ে কৃত্রিমভাবে মেধার বিস্ফোরণ ঘটানোর নীতি—এসব কিছুর সম্মিলিত ফলাফল হচ্ছে শিক্ষার মানে ধস। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক না হলে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক ফল গ্রাস করবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে।
মনে পড়ছে ২০১২ সালের ১৯ জুলাইয়ের পত্রিকাগুলোর কথা। তার আগের দিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সব পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় হাস্যোজ্জ্বল শিক্ষার্থীদের মুখের ছবি। মুখগুলো আনন্দে উচ্ছ্বসিত, চোখে নতুন সম্ভাবনা এবং পদক্ষেপে সামনে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয়। উচ্ছ্বাসে ভরা কচি কচি মুখগুলো দেখে ভালোই লাগছিল। কিন্তু ফলাফল বিশ্লেষণ করে এবং নম্বর দেওয়ার পেছনের ইতিবৃত্ত জেনে চমকে উঠেছিলাম।
২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (জিপিএ-৫) পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রথমবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন মাত্র ২০ জন শিক্ষার্থী। এর নয় বছর পর ২০১২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫১ হাজার ৪৬৯ জন শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ দেখে এবং বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়া দেখে অনেকের মনে হতে পারে যে, উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনাটা ভালোই হচ্ছে! কিন্তু আসল সত্যটা যে অত্যন্ত হূদয়বিদারক, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হই যখন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৫৫ শতাংশ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী উত্তীর্ণই হতে পারেন না।
গড় পাসের হার ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়া দেখার পর হাঁড়ির খবরটি জানার জন্য আমি বেশ কয়েকজন কলেজশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা আমাকে জানান, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ের খাতা দেওয়ার সময় শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে শিক্ষকদের লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনায় উদারভাবে নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা থাকে। নির্দেশনায় এমন কথাও বলা থাকে যে, শিক্ষার্থী ভুল-শুদ্ধ যা-ই লিখুক না কেন, তাকে নম্বর দিতেই হবে। আর নম্বর দিতে হবে বাড়িয়ে বাড়িয়ে। যে শিক্ষার্থী পাস নম্বর পাওয়ার যোগ্য নন, তাঁকে পাস নম্বর বা তার অধিক নম্বর দিতে হবে। আর বাড়িয়ে বাড়িয়ে নম্বর দেওয়ার ফলে যে শিক্ষার্থী ৫০ নম্বর পাওয়ার যোগ্য, তিনি পেয়ে যান ৬০, ৬৫, ৭০ বা তার অধিক। নম্বর দেওয়ার বেলায় উদার নীতিমালা অনুসরণ করার ফলে কৃত্রিমভাবে মেধার বিস্ফোরণ ঘটে। উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে আমরা দেখতে পাই, হাজার হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখতে পাই, জিপিএ-৫, গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বা বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হতে পারেন না।
একজন শিক্ষার্থী হয়তো ৫০ অথবা ৬০ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বাড়িয়ে বাড়িয়ে নম্বর দেওয়ার ফলে তিনি হয়তো জিপিএ-৫ পেয়ে গেলেন। এতে ফলাফলে শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধা ও মানের প্রতিফলন হলো না। ফলাফলে ওই শিক্ষার্থী হয়তো জিপিএ-৫ পেয়ে গেলেন, কিন্তু এতে তাঁর ভাষার দুর্বলতাও কাটল না বা তাঁর বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের অগভীরতাও দূর হলো না। ভাষার দুর্বল ভিত্তি এবং বিষয়ভিত্তিক অগভীর জ্ঞান নিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া একজন শিক্ষার্থী যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় নেন, তখনই তাঁর অযোগ্যতা ফাঁস হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বা বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় তো আর বাড়িয়ে বাড়িয়ে নম্বর দেওয়া হয় না, যে শিক্ষার্থী যে নম্বরের যোগ্য, তাঁকে সেই নম্বরই দেওয়া হয়। এতে করে দেখা যায়, জিপিএ-৫ পাওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিদারুণভাবে অযোগ্য!
গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মনে হয়েছে, জিপিএ-৫ পাওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ভাষার ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান খুবই অগভীর এবং পড়াশোনার প্রতি ‘সিরিয়াসনেস’ হতাশাজনক। এই জেনারেশনকে আমি অনেক সময় ‘কোচিং সেন্টার জেনারেশন’ বা ‘এমসিকিউ জেনারেশন’ বা ‘মোবাইল ফোন’ জেনারেশন বলে থাকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের গড়পড়তা মান নিয়ে আমি দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছি। আইনে স্নাতক সম্মান চালু হওয়ার পর থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই বিভাগে ভর্তি হয়ে আসছেন। এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের মাধ্যমে যাঁরা ভর্তি হন, তাঁদের মধ্যে আইন, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য মেধাতালিকায় যাঁরা প্রথম দিকে থাকেন, তাঁদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ দেখা যায়। এ রকম একটি ভর্তি-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভর্তি হয়ে আসার পরও দেখি, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের গড়পড়তা মান আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের অবস্থা যে এর চেয়ে ভালো, তা-ও নয়।
মূলত শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে যে আশঙ্কাজনক অধঃপতন হয়েছে, তার জন্য সামগ্রিক ব্যবস্থাটাই দায়ী। স্কুল-কলেজে ভাষা বিষয়ে যথাযথ শিক্ষা না দেওয়া, বিষয়ভিত্তিক গভীর পাঠদান ও পাঠাভ্যাসের অনুপস্থিতি, পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিষয়ে পাঠাভ্যাস কমে যাওয়া, ‘শর্টকাট’ উপায়ে সফল হওয়ার প্রবণতা, কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভরশীলতা, বাড়িয়ে বাড়িয়ে নম্বর দিয়ে কৃত্রিমভাবে মেধার বিস্ফোরণ ঘটানোর নীতি—এসব কিছুর সম্মিলিত ফলাফল হচ্ছে শিক্ষার মানে ধস। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক না হলে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক ফল গ্রাস করবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে।
আমরা এই জি পি এ ভিত্তিতে প্রথম ব্যাচ তারপরেও এত প্রবলেম তৈরী হয়নি। আর এখন শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা বড় নৈরাজ্য চলছে প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নাই।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment