নারীর স্বার্থে সুন্দরী প্রতিযোগিতার অবসান


নারীদেহ বিবসনা করে প্রতিযোগিতা এক শ্রেণীর মানুষের জন্য আনন্দের হলেও নারীর জন্য অবমাননাকর। সময় এসেছে নারীবাদীদের এই ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ নামে দেশে-বিদেশের তাবৎ সুন্দরী প্রতিয়োগিতার প্রতিবাদ করার।
বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজকদের কাছেও আমার দুটি প্রশ্ন; এক. কেন নারীদের সৌন্দর্য্যের প্রতিযোগিতা করতে হবে? দুই. নারীকে কেন প্রতিযোগিতার নামে বিবসনা হতে হবে?
নারী কোনো পণ্য নয়। নারীদের অধিকার নিয়ে নারী নেত্রীদের সরব দেখি। কিন্তু প্রতিযোগিতার নামে নারীকে বিশ্বমিডিয়ার সামনে বিবস্ত্র করার বিষয়ে আমরা কেন জানি নিশ্চপ! এর অর্থ এই দাঁড়ায়- আমরা নারীকে পণ্য বানানোর কর্মকাণ্ডে মৌন সমর্থন দিচ্ছি। অথবা কিছু বলে পুঁজিবাদের দুনিয়ায় পুঁজিপতিদের চোখের কাটা হতে চাচ্ছি না?
নারীদের এক সময় ‘মহিলা’ বলা হতো। কারণ, তাদের বিশেষ মহলে রাখা হতো। সেটি রাজা-বাদশার যুগে, রানীদের রাজকীয় সাজে অন্তরের আসরে রাখা হতো। এখনো আমাদের দেশের অনেক মুসলিম পরিবারের মেয়ে ও মায়েরা ঘরকে নারীর জন্য অধিকতর শ্রেয় মনে করে থাকে। নারীকে ইসলাম ঘরের মধ্যে বসে থাকতে বাধ্য করেননি। তবে নিজেকে সংরক্ষণ করে রাখতে বলেছে। কিন্তু সংস্কৃতি বা সুন্দরী প্রতিযোগিতার নারীরা যখন নগ্নতায় জড়িয়ে পড়ে, তখন নিজের নারীত্ব সংরক্ষণ বেশ দুরুহ হয়ে পড়ে।
নারী মহলে থেকে মহিলাই থাকুক, এটা আমরা চাই না। নারীরা নিজেদের আত্মমার্যদা রক্ষায় সক্রিয় হোক। তাদের মনে রাখতে হবে সুন্দরী প্রতিযোগিতা নারীর মর্যাদা বাড়ায় না। বরং নারীকে উপভোগ্য ও লালসার বস্তুতে পরিণত করে। যেটি কারও কাম্য নয়।
নারী হচ্ছে পুরুষের পরিপূরক, কখনো সম্পূরক। শারীরিক গঠনের কারণে নারীরা পুরুষের সমান পরিশ্রম হয়তো বা করতে পারে না। কিন্তু তাই বলে নারীরা পিছিয়ে থাকবে তা হয় না। নারীদের দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। ওই সব ক্ষেত্রে কাজ করলে নারী দেশ ও সমাজের জন্য অনেক অবদান রাখতে সক্ষম। একটু নজরে দেখা যাবে, নারীরা পৃথিবীতে রান্নাঘর থেকে হোয়াইট হাউজে পর্যন্ত অবদান রাখছেন। নারীর স্পর্শে সফলতার সোনা ফলছে। তাই আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, আমরা নারীকে নগ্ন প্রতিযোগিতায় দেখতে চাই না। নারীকে সম্মানের আসনে দেখতে চাই।
কিছু নারী নেত্রী রয়েছেন, যারা মনে করেন ইসলাম নারীকে একঘরে করে রেখেছে। তাদের এমন ধারণার মূলে রয়েছে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা। সাধারণত নারী শ্রমিকদের ইসলামের প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টির জন্য একটি শ্রেণী ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করছে। অথচ হযরত মোহাম্মদ (সা.) নারীদের ঘরে বসে থাকতে বলেননি। রাসুল (সা.) বিভিন্ন যুদ্ধ ও সফরে তার স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। রাসুল (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা.) নিজে একটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। উটের পিঠে চেপে তিনি যুদ্ধে অংশ নেয়ার কারণে ওই যুদ্ধকে ‘উষ্টীর যুদ্ধ’ বলা হয়ে থাকে।
ইসলাম বলেছে, নারীরা যখন প্রয়োজনীয় কাজে ঘর ছেড়ে বাইরে যাবে তখন তারা ঘরের পরিবেশ বজায় রাখবে। এর অর্থ, সে নিজেকে সংযত রাখবে, সংরক্ষণ করবে। ইসলাম ধর্মের বিধানে নারীরা সব কাজই পরতে পারবে।
এ বিষয়ে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, ইন্দোনেশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী সুরিয়াধর্মা আলিকে। যিনি তার দেশে ৮ সেপ্টেম্বর সম্ভাব্য ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করেছেন। তিনি তার দেশের বেশিরভাগ মানুষের চেতনার পক্ষে মত দিয়েছেন। তার এ অবস্থানের জন্য পৃথিবীর মুসলিম নারীরা তাকে সাধুবাদ জানাবে।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ৮ সেপ্টেম্বর যে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ বা বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটি শুরুর আগেই ওই দেশের আলেম সমাজ ও উলামা কাউন্সিল প্রতিবাদ করে আসছে। এ আয়োজনের একেবারেই বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ওই দেশের ইসলামপন্থি দলগুলো। প্রতিযোগিতার আয়োজকদের এ আয়োজন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী সুরিয়াধর্মা আলি। দেশটির ধর্মবিষয়ক এই মন্ত্রী ছাড়াও ওই দেশের জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা এই প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করেছে।
একটি দেশ মুসলিম অধ্যুষিত না হিন্দু বৌদ্ধ অধ্যুষিত তা বোঝার আগে পৃথিবীর সব নারীদের বোঝা উচিত নারী কোনো ভোগ্য পণ্য নয়। একজন পুরুষের মতো নারীও সম্পূর্ণ আলাদা একজন মানুষ। মানুষের দেহের কোনো প্রতিযোগিতা হয় না।

Comments

Popular posts from this blog

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা