নিজেদের লোকজনের কাছে জমি বিক্রয় না করে বাহিরের লোকের কাছে জমি বিক্রয় করলে মামলার মাধ্যমে বিক্রীত জমি ফেরত নেয়া যায়

নিজেদের লোকজনের কাছে জমি বিক্রয় না করে বাহিরের লোকের কাছে জমি বিক্রয় করলে মামলার মাধ্যমে বিক্রীত জমি ফেরত নেয়া যায়


justice2
আলম সাহেবের দুই সন্তান, জাহেদুল আলম ও আবিদ আলম। আলম সাহেব মারা যাবার পর যখন জাহেদুল আলম ও আবিদ আলম সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করতে যায় তখন থেকেই তাদের মধ্যে মনমালিন্যের শুরু। তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত তাই, তাদের মধ্যে তেমন সুসম্পরক ছিল না। পৈত্রিকসূত্রে তারা বাড়ির জমি ছাড়াও কিছু ফসলি জমি পেয়েছিল। জাহেদুল আলম একজন ব্যাবসায়ী এবং ব্যাবসার বদৌলতে তার অবস্থা অনেক সচ্ছল। অপরদিকে আবিদ আলম তেমন কিছুই করে না। ফলে বিভিন্ন কাজে তাকে ধারদেনা করে চলতে হয়। ধীরে ধীরে আবিদ আলম অনেক দেনাদার হয়ে পরে এবং ঋণদাতাদের ক্রমাগত চাপের ফলে সে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে তার বাড়ির জমির কিছু অংশ ও কিছু ফসলি জমি বিক্রয় করে দিবে। যেহেতু তার বড়ভাই জাহেদুল আলম এর সাথে তার সম্পর্ক ভাল ছিল না তাই সে তার জমি অনিন্দিতা সরকার এর কাছে বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। জাহেদুল আলম যখন জানতে পারে যে ছোটভাই আবিদ আলম তার জমি বিক্রয় করতে ইচ্ছুক তখন সে ঐসব জমিগুলো কিনতে আগ্রহী হয়, কারন সে চায় যে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি তার কাছেই থাকুক। কিন্তু আবিদ আলম তার বড়ভাইকে না জানিয়ে জমিগুলো বিক্রয় করে দেয়। এখন জাহেদুল আলম কি কোনভাবে প্রতিকার (ঐ জমি পুনরায় ক্রয় করা) পেতে পারে? পেলে কিভাবে?
হ্যা, এক্ষেত্রে জাহেদুল আলম অবশ্যই প্রতিকার পেতে পারেন প্রিএম্পশন বা অগ্রক্রয় মামলার মাধ্যমে। নিজেদের লোকজনের কাছে জমি বিক্রয় না করে বাহিরের লোকের কাছে জমি বিক্রয় করলে দেওয়ানি আদালতে মামলার মাধ্যমে সেই জমির দাম (মূল্য) ক্রেতাকে ফেরত দিয়ে বিক্রীত জমি ফেরত নেয়া যায়। এই মামলাকেই প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয় মামলা বলে। সাধারনত প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয় বলতে, কোন জমির মালিকের অংশীদার বা পাশের জমির মালিক বা যার ঐ জমিটি অত্যন্ত প্রয়োজন সেই ব্যাক্তি কর্তৃক অন্যত্র বিক্রয় করা জমির বিক্রয়মূল্য ফেরত দিয়ে পুনরায় ক্রয় করার অধিকারকে বুঝায়। অতএব, এখানে জাহেদুল আলম প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয়ের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন। এজন্য তাকে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে। জমির মূল্য অনুযায়ী সেটা যে দেওয়ানী আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পরে সেখানে মামলা করতে হবে।
তবে কৃষি বা অকৃষি জমির ক্ষেত্রে প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয় আইনে কিছু পার্থক্য আছে। অকৃষি জমির ক্ষেত্রে শরিকসূত্রে মালিক বা ক্রয়সূত্রে যারা শরিক তারা প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয় এর অধিকার পাবেন এবং কৃষি জমির ক্ষেত্রে ক্রয় ও উত্তরাধিকারসুত্রে মালিক ছাড়াও পাশের জমির মালিকও প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয় এর অধিকার পাবেন।
যাদের প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয় এর অধিকার আছে তারা হলেন-
  • উত্তরাধিকার, বাটোয়ারা, দান ইত্যাদি সূত্রে মালিক থাকলে ক্রয়সূত্রে মালিক ও পাশের জমির মালিক এই সুবিধা পাবেন না,
  • ক্রয়সূত্রে ছাড়া অন্য কোন মালিক থাকলে সেই মালিক এই সুবিধা পাবেন তবে পাশের জমির মালিক এই সুবিধা পাবেন না,
  • যদি উপরোক্ত ধরনের কোন মালিক না থাকে তবে পাশের জমির মালিক এই সুবিধা পাবেন,
তবে পাশের জমির মালিক যেহেতু কয়েকজন থাকে সেহেতু তাদের মধ্যে কে অগ্রাধিকার পাবেন সেটি নির্ভর করে নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর-
  • প্রার্থীদের জমির পরিমান,
  • সংলগ্ন জমিতে কোন বসতবাড়ি আছে কিনা,
  • প্রার্থীদের প্রয়োজনীয়তা,
  • বিক্রিত জমির সাথে প্রার্থীদের এজমেন্ট বা সুখাধিকার।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয় মামলা করার কোন অধিকার থাকবেনা, যদি-
  • উত্তরাধিকারসূত্রে কোন শরিক কোন জমি ক্রয় করে,
  • বিনিময়, বাটোয়ারা বা দানের ক্ষেত্রে কখনো প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয় এর অধিকার জন্মায় না কারন এখানে জমি বিক্রয় করা হয়নি,
  • স্বামী,  স্ত্রী, পিতা, পিতামহ, নাতি-নাত্নী, চাচা,ভাই, ভাগ্নে-ভাগ্নী, দত্তকপুত্রের অনুকূলে উইল বা দান করা হয়,
  • কোন মুসলমান যদি ওছিয়ত বা হেবা করে যান,
  • কোন জমি যদি খাই-খালাসী বন্ধক রাখা হয় বা কোন ওয়াকফ, দাতব্য কাজে বা কোন ধর্মীয় কাজে দেওয়া হয়,
  • যাদের প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয়ের অধিকার আছে তাদের মধ্যে যদি কারও ৬০ বিঘা জমি থাকে তবে তারও এই অধিকার থাকবে না।
সাধারনত এই ধরনের জমি বিক্রয় বা হস্তান্তরিত হলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অংশীদারদের প্রতি নোটিশ জারি করে। এই নোটিশ জারির চার (৪) মাসের মধ্যে প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয়ের মামলা করতে হয়। নোটিশ জারি না হলে হস্তান্তরিত হবার খবর জানার চার (৪) মাসের মধ্যে এই মামলা করতে হয়। অগ্রক্রয়ের মামলা হলে অংশীদার বা পাশের জমির মালিক দের নোটিশ দেয়া হয়। কেউ প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয়ের মামলা দায়ের করলে অন্যান্যরা কৃষি জমির ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের নোটিশ জারির পর দুই (২) মাসের মধ্যে ও অকৃষি জমির ক্ষেত্রে এক (১) মাসের মধ্যে পক্ষভুক্ত হতে পারে। মামলা দায়েরের জন্য ৫০০ টাকা কোর্ট ফি দিতে হবে।
অগ্রক্রয়ের মামলা করতে হলে দলিলে যে মূল্য উল্লেখ আছে সেই টাকা ছাড়াও অকৃষি জমির ক্ষেত্রে আরো শতকরা ৫ টাকা এবং কৃষি জমির ক্ষেত্রে শতকরা ১০ টাকা করে অতিরিক্ত টাকা আদালতে জমা দিতে হবে। অগ্রক্রয়ের আদেশ দেয়া হলে এই টাকা ফেরত দেয়া হয়।
প্রিএম্পসন বা অগ্রক্রয়ের মামলা দায়ের করতে হলে আইনানুযায়ী সকল পক্ষভুক্ত করতে হয়। মামলা দায়ের হলে এদের উপর নোটিশ জারি হয়। কেউ পক্ষভুক্ত হতে চাইলে তাকে পক্ষভুক্ত করা হয়। এরপর আদালত সাক্ষ্য প্রমান নিয়ে যদি মনে করে মামলা সঠিক তবে ক্ষতিপূরনসহ ক্রয়মুল্য ক্রেতাকে ফেরত দিয়ে শরিক, ক্রয়সূত্রে মালিক বা পাশের জমির মালিকের নামে দলিল রেজিস্ট্রি করার আদেশ দিতে পারেন। এখানে যদি পূর্বতন ক্রেতা জমিটি ক্রয়ের পর ভূমি উন্নয়ন কর, মাটি ভরাট, বিদ্যুত লাইন, দেনা পরিশোধ ইত্যাদি উন্নয়নের ব্যাপারে কোন ব্যয় করে থাকেন তবে আদালত সেই টাকাও ফেরত দিতে আদেশ দিবেন। অকৃষি জমির ক্ষেত্রে এইসব খরচের উপর শতকরা ৬.২৫ টাকা হারে সুদসহ ফেরত দিতে হবে তবে কৃষি জমির ক্ষেত্রে  এইরূপ কোন সুদ দেয়ার নিয়ম নেই।

Comments

Popular posts from this blog

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা