চাকরিস্থলে দূর্ঘটনাঃ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ কে দেবেন?
চাকরিস্থলে দূর্ঘটনাঃ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ কে দেবেন?
প্রায়ই খবরের কাগজে ফ্যাক্টরিতে কিংবা দোকানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক নিহত ও আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। গত এপ্রিল মাসে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা সাভারে রানা প্লাজা ট্রাজেডীতে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যু। গত ৮ অক্টোবর আসওয়াদ কম্পেজিট কারখানায় আগুনে মারা যান সাত শ্রমিক। অনেক সময় মালিক পক্ষের গাফিলতির কারণে এরকম বড় বড় দূর্ঘটনা ঘটে থাকে বলে জানা যায়। দূর্ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে কখনও কখনও ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি দূর্ঘটনার জন্য বেশিরভাগ মালিকপক্ষকে দোষারোপ করেন। মালিকপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়া আহত শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং নিহতদের সাধ্যমত ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন। অপরদিকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন আহত ও নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে তুলে ধরেন। গার্মেন্টস বা ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু নয়। এর আগেও অনেক দূর্ঘটনা ঘটেছে। নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। অধিকাংশ দূর্ঘটনাই মালিক পক্ষের অসাবধানতার কারণে হয়ে থাকে। অল্প বেতনে চাকরি করা এসব শ্রমিকদের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করা হয় না। মালিকপক্ষের সামান্য অবহেলা বা গাফিলতির কারণে অনেক পরিবার সর্বহারা হয়ে থাকে। মা হারায় তার প্রিয় সন্তানকে, স্ত্রী হারায় তার স্বামীকে, সন্তান হারায় তার প্রিয় বাবাকে। ২০০৬ সালে প্রণীত বাংলাদেশ শ্রম আইনে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য বেশ কিছু বিধান করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে
ধুলাবালি ও ধোঁয়া:শ্রম আইনের ৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়া চলার কারণে যদি ধুলাবালি বা ধোঁয়া বা অন্য কোনো দূষিত বস্তু নির্গত হয়, যাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা থাকে তাহলে কোনো কর্মকক্ষে যাতে এটা জমতে না পারে এবং শ্রমিকের প্রশ্বাসের সঙ্গে জমতে না পারে তার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যক প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক অংশে শ্রমিকরা যেখানে কাজ করেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ধুলাবালি ও ধোঁয়া:শ্রম আইনের ৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়া চলার কারণে যদি ধুলাবালি বা ধোঁয়া বা অন্য কোনো দূষিত বস্তু নির্গত হয়, যাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা থাকে তাহলে কোনো কর্মকক্ষে যাতে এটা জমতে না পারে এবং শ্রমিকের প্রশ্বাসের সঙ্গে জমতে না পারে তার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যক প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক অংশে শ্রমিকরা যেখানে কাজ করেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ভবন ও যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা: শ্রম অইনের ৬১ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের কোনো ভবন বা ভবনের কোনো অংশ মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হলে উহা মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে।
অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে সতর্কতা: শ্রম আইনের ৬২ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রত্যেক তলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী অন্তত একটি সিঁড়ি বহির্গমনের উপায় এবং অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। বহির্গমনের পথ তালাবদ্ধ বা আটকে রাখা যাবে না। অগ্নিকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত বহির্গমনের পথ স্পষ্টভাবে লাল রং দ্বারা বাংলা অক্ষরে অথবা অন্য কোনো সহজভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের সময় হুশিয়ার করার জন্য স্পষ্টভাবে হুশিয়ারি সংকেতের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কক্ষে কর্মরত শ্রমিকদের অগ্নিকাণ্ডের সময় বিভিন্ন বহির্গমনের পথে পৌঁছার সহায়ক একটি অবাধ পথের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পঞ্চাশ বা ততোধিক শ্রমিক সংবলিত কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে বছরে একবার অগ্নিনির্বাপক মহড়ার আয়োজন করতে হবে।
মৃত্যুজনিত সুবিধাঃ মৃত্যুজনিত সুবিধা সম্পর্কে শ্রম আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো শ্রমিক যদি মালিকের অধীনে অবিচ্ছিন্নভাবে অন্তত তিন বছরের অধিককাল চাকরিরত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে মালিক মৃত শ্রমিকের কোনো মনোনীত ব্যক্তি বা মনোনীত ব্যক্তির অবর্তমানে তার কোন পোষ্যকে তার প্রত্যেক পূর্ণ বছর বা ৬ মাসের অধিক সময় চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের মজুরি অথবা গ্র্যাচুইটি যা অধিক হয় প্রদান করবেন এবং মৃত শ্রমিক চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলে যে সুবিধা প্রাপ্ত হতেন তার অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে।
ক্ষতিপূরণ প্রদান: শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে শ্রম আইনের ১৫০ ধারায় বলা হয়েছে যে, চাকরিকালে দূর্ঘটনাকালে শ্রমিক জখমপ্রাপ্ত হলে মালিক তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। মালিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন না যদি :
১. জখমের ফলে ৩ দিনের অধিক সময় শ্রমিক আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা হারান। জখমের ফলে মারা যাননি এরূপ কোন শ্রমিকের দূর্ঘটনায় জখমপ্রাপ্ত হওয়ার পর্যাপ্ত কারণ থাকে। যেমন
ক. দুর্ঘটনার সময় শ্রমিক মদ্যপান বা মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে প্রভাবাধীন থাকা।
খ. ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রমিক তার নিরাপত্তার বিধান সংবলিত শ্রম আইন অমান্য করলে।
৩. শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো আঘাত নিরোধক নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা অন্যকোন কৌশল অপসারণ করা বা উপেক্ষা করা।
১. জখমের ফলে ৩ দিনের অধিক সময় শ্রমিক আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা হারান। জখমের ফলে মারা যাননি এরূপ কোন শ্রমিকের দূর্ঘটনায় জখমপ্রাপ্ত হওয়ার পর্যাপ্ত কারণ থাকে। যেমন
ক. দুর্ঘটনার সময় শ্রমিক মদ্যপান বা মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে প্রভাবাধীন থাকা।
খ. ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রমিক তার নিরাপত্তার বিধান সংবলিত শ্রম আইন অমান্য করলে।
৩. শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো আঘাত নিরোধক নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা অন্যকোন কৌশল অপসারণ করা বা উপেক্ষা করা।
মালগুদাম ও কারখানার লাইসেন্স: কোনো লোক কোনো ভবন বা বাসস্থানকে মালগুদাম কিংবা কারখানা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে অগ্নিনির্বাপণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ভবনের মালিক বা দখলদার ভবনটির অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নি প্রতিরোধসহ অন্যান্য জননিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংযোজন বা সংশোধন করতে বাধ্য থাকবেন। নতুন ভবনটির অগ্নি নির্বাপণের ক্ষেত্রে অনুপযোগিতার কারণে ব্যবহার উপযোগী নয় মর্মে মহাপরিচালক ঘোষণা করতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হয়ে যদি কোনো ভবন বা স্থানকে মালগুদাম বা কারখানা হিসেবে ব্যবহার করেন, তবে তিনি অন্যূন ৬ মাসের কারদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
Comments
Post a Comment