কখন আপনি একজন অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন

কখন আপনি একজন অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন

Handcuffs
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আমরা ছোট বড় অনেক ধরনের কাজই করে থাকি। এই সব কাজগুলো আমরা একা অথবা কয়েকজন মিলে করে থাকি। এসব কাজের মধ্যে আমরা বৈধ অবৈধ দুই ধরনেরই কাজ করে থাকি। বৈধ কাজগুলো নিয়ে তেমন কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু যে কাজগুলো আমরা অবৈধ বলে জানি তার মধ্যে কিছু কিছু কাজ কি অপরাধ হয়ে যায়?
হ্যা, যায়। কারন, এই সব অবৈধ কাজগুলোর মধ্যে যেসব কাজ দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হয় সেসব কাজই অপরাধ বলে গন্য হয়। কিন্তু সব অবৈধ কাজই কি অপরাধ?
না। কারন, শুধুমাত্র যেসব কাজ দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী সেসব কাজই অপরাধ। কিন্তু সব অবৈধ কাজই অপরাধ নয়। কারন, কারও বিপদে সাহায্য করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এবং কারও বিপদে সাহায্য না করা নৈতিকতা বিরোধী বা নীতিগতভাবে অবৈধ কিন্তু অপরাধ নয়। আমরা এই বিষয়টা অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করতে পারি যেমন, পুর্ণবয়ষ্ক কোন মুসলমান ব্যাক্তি যদি স্ত্রী ব্যাতিত অন্য কোন মহিলার সাথে যৌন কাজে লিপ্ত হয় তবে তা ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ কিন্তু দেশের আইনে অপরাধ নয় (যদি ঐ মহিলার পূর্ণ সমর্থন বা সম্মতি থাকে)।
কোন একটি কাজকে অপরাধ বলে গন্য করতে হলে অবশ্যই ঐ কাজের মধ্যে নিম্নোক্ত ধরনের বৈশিষ্ট্ থাকতে হবে নতুবা ঐ কাজটি অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যেমন-
  • কোন এক ধরনের কাজ হতে হবে,
  • অপরাধমূলক অভিপ্রায় থাকতে হবে,
  • ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘন হতে হবে,
  • যেকোন ধরনের শাস্তি থাকবে (কৃতকর্মের ফল হিসেবে),
  • প্রতিরক্ষা বা আত্মপক্ষ সমর্থনজনিত কোন কাজ হবে না।
তাহলে আমরা বলতে পারি যে, যেসব কাজের প্রকৃতি অপরাধমূলক ও দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী তাই অপরাধ। কিন্তু সবচেয়ে গুরত্বপুর্ণ ও মজার বিষয় হলো ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু কাজ অপরাধমূলক হলেও বা দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী বলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবার কথা হলেও (আপাত বা সাধারন দৃষ্টিকোন থেকে) সে সব কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। কারন বাংলাদেশ দন্ডবিধির ধারা ৭৬-১০৬ পর্যন্ত ধারাগুলোতে বর্ণিত কার্যাবলী কখনো অপরাধমূলক হলেও তা কখনই অপরাধ বলে গন্য হবে না। যেমন-
  • আইনবলে বাধ্য বা ভুল ধারণাবশতঃ নিজেকে আইনবলে বাধ্য বলে বিশ্বাসকারী ব্যাক্তিবিশেষ কর্তৃক সম্পাদিত কাজ (ধারা ৭৬),
  • আদালতের রায় বা আদেশের অনুসরণে সম্পাদিত কাজ (ধারা ৭৮),
  • আইনানুগ কাজ সম্পাদনকালে দূর্ঘটনা (ধারা ৮০),
  • অপরাধমূলক অভিপ্রায় ব্যতিরেকে, ক্ষতি নিবারণকল্পে সম্পাদিত কাজ (ধারা ৮১),
  • সাত বছরের কম বয়স্ক শিশুর কাজ (ধারা ৮২),
  • সাত বছরের অধিক বয়স্ক ও বার বছরের কম বয়স্ক অপরিণত বোধ শক্তিসম্পন্ন শিশুর কাজ (ধারা ৮৩),
  • অপ্রকৃতিস্থ ব্যাক্তির কাজ (ধারা ৮৪),
  • অনিচ্ছাকৃত প্রমত্ততার দরুন বিচারশক্তি রহিত ব্যাক্তির কাজ (ধারা ৮৫),
  • সদবিশ্বাসে কৃত কোন কাজ (ধারা ৯৩),
  • যে কাজ করার জন্য ভীতি প্রদর্শন করে কোন ব্যাক্তিকে বাধ্য করা হয় (ধারা ৯৪),
  • সামান্য ক্ষতিকারক কোন কাজ,
  • প্রতিরক্ষামূলক কাজ (ধারা ৯৬ থেকে ১০৬),ইত্যাদি।
এবং নিম্নবর্ণিত ৭টি অবস্থায় কোন ব্যাক্তি অপরাধমূলক কোন কাজ করলেও সেই কাজ কখনই অপরাধ বলে গণ্য হবে না-
  • যদি ঐ ব্যাক্তির অপরাধমূলক অভিপ্রায় না থাকে,
  • যদি কাজটি দৈব দুর্বিপাক, দুর্ঘটনা বা দুর্ভাগ্যবশত হয়ে থাকে,
  • তথ্যের ভুল ধারণাবশত কোন কাজ করলে,
  • কোন ব্যাক্তির সম্পতিমতে তার বিরুদ্ধে কোন অপরাধমূলক কাজ করলে। যেমন- তাকে আহত করলে (কিন্তু মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটে এইরুপ কাজ না),
  • কাজটি অতি তুচ্ছ হলে,
  • কাজটি প্রতিরক্ষামূলক হলে,
  • কাজটি বিচার সংক্রান্ত হলে।
তাই আমরা বলতে পারি যে, সকল অপকর্ম বা অবৈধ কাজই অপরাধ নয়। শুধুমাত্র যে কাজের বা কর্মের জন্য দেশের আইনে শাস্তির বিধান আছে সেইসব কাজ কে অপরাধ বলে।

Comments

Popular posts from this blog

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা