কিশোর অপরাধ,অপরাধের প্রবনতা এবং আমাদের করণী

কিশোর অপরাধ,অপরাধের প্রবনতা এবং আমাদের করণীয়


বর্তমান বিশ্বে কিশোর অপরাধ অনেক জটিল একটি বিষয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই কমবেশী কিশোর অপরাধ ঘটে থাকে। দিন দিন এই কিশর অপরাধ ও কিশর অপরাধীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। কিন্তু বেশিরভাগ দেশই কিশোর অপরাধ দূরীভূত করার জন্য তেমন কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেনি বা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এমনকি আন্তর্জাতিক ভাবে এখনো তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।
কিশোর অপরাধ বলতে শিশু বা কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত কোন অপরাধ কে বুঝায়। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণত ১২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বয়সের কোন ব্যাক্তি যদি কোন অপরাধ করে তবে তাকে কিশোর অপরাধ এবং ঐ ব্যাক্তিকে কিশোর অপরাধী বলে।
কিন্তু কিশোর অপরাধীর বয়স নিয়ে আমাদের দেশের সাথে অন্যান্য দেশের কিছুটা পার্থক্য আছে। কারন, Majority Act-1875, অনুসারে ১৮ বছরের নিচে কোন ব্যাক্তিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয় কিন্তু আবার Child Marriage Restraint Act-1939, অনুসারে ছেলেদের ২১ বছরের নিচে ও মেয়েদের ১৮ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে National Children Policy 1994 ও Labour Code 2006 অনুসারে ১৪ বছরের নিচে কাউকে শিশু বলে ধরা হয়। কিন্তু Children Act অনুসারে শিশু ধরা হয় ১৬ বছরের কম বয়সীদের। অন্যদিকে United Nations Convention on the Rights of Children (CRC) অনুসারে ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু বলা হয়।
বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১৮৬০ অনুসারে, ৯ বছরের কম বয়সীদের শিশু বলে বিবেচনা করা হয় ও এদের দ্বরা কৃত কোন অপরাধ মূলক কাজও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
তাই আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশে কিশোর অপরাধী বলতে ১২-১৬ বছর বয়সীদের বুঝায় ও ক্ষেত্রবিশেষে ৯-১৬ বছর বয়সীদের বুঝায় (যেক্ষেত্রে ঐ শিশুর ভালমন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে)।
Children Act এর ধারা ৩ অনুসারে বাংলাদেশে কিশোর আদালতে স্থাপনের কথা বলা আছে। কিন্তু এই ধরনের আদালত না থাকলে নিম্নোক্ত আদালতে কিশোর অপরাধীদের বিচার করা যাবেঃ
  • হাইকোর্ট ডিভিশন,
  • দায়রা জজ আদালত,
  • অতিঃ দায়রা জজ আদালত,
  • প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট।
কোন কিশোর অপরাধীকে (অনূর্ধ ১৬ বছর) গ্রেফতার করার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপরাধীকে আদালতে উপস্থিত না করেই জামিন দিতে পারেন এমনকি অ-জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেও। যদি তিনি কিশোর অপরাধীকে জামিন না দেন তবে তাকে আদালতে উপস্থিত করার সময় পর্যন্ত নিরাপদ জায়গায় রাখবেন। Children Act এর ধারা ১৩(২) অনুসারে এইরূপ গ্রেফতারের পর অবশ্যই ঐ কিশোর অপরাধীর অভিভাবককে সংশ্লিস্ট গ্রেফতারের বিষয়ে অবশ্যই জানাবেন।
Children Act অনুসারে একজন কিশোর অপরাধীকে কখনই একত্রে (jointly) অন্য কোন প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর সাথে বিচার করা যাবেনা। যদিও ফৌজদারী কার্যবিধির ২৩৯ ধারা অনুসারে একত্রে চার্জগঠন ও বিচার করা যাবে বলে বলা আছে তবুও Children Act এর ধারা ৬ অনুসারে এইরূপ কখনই করা যাবে না। কোন আদালত যদি Children Act এর ধারার ব্যাত্যয় ঘতায় তবে ঐ আদালতের রায় বাতিল বলে গন্য হবে। (shiplu and anothers Vs state,, 49 DLR, HCD, 53)
কিন্তু কোন মামলায় যদি চার্জ গঠনের সময় অপরাধীর বয়স কম থাকে কিন্তু বিচারের সময় যদি অপরাধীর বয়স ১৬’র বেশী হয় তবে একত্রে বিচার করা যাবে। (bimal das Vs state,, 46 DLR, HCD, 460)
Children Act এর ধারা ৭ অনুসারে, যদি কোন কিশোরকে কোন প্রাপ্তবয়স্কের সাথে একত্রে অভিযোগ গঠন করা হয় তবুও ঐ কিশোরের বিচার একই আদালতে বা এজলাসে একত্রে করা যাবেনা। অবশ্যই কোন আলাদা ঘরে বা আদালতে বা এজলাসে করতে হবে।
কোন কিশোর যদি কোন অপরাধ করেছে বলে প্রমান হয় তবুও নিম্নোক্ত ধরনের শাস্তি কখনও দেয়া যাবে না-
  • মৃত্যুদন্ড,
  • দীপান্তর,
  • জেল (যদিনা আদালত বলে যে কিশোরটি মারাত্বক ধরনের অপরাধ করেছে)।
একজন কিশোর অপরাধীকে সাজা দেবার সময় আদালত অবশ্যই নিম্নোক্ত বিষয় বিবেচনা করবেন-
  • কিশোরটির বয়স ও চরিত্র,
  • কিশোরটির বসবাসের পরিবেশ,
  • প্রবেশন অফিসার এর রিপোর্ট।
একজন কিশোর এর ভালমন্দ বোঝার ক্ষমতা অনেক কম। সে যে অপরাধ করে এ বিষয়ে তার নলেজ অনেক কম থাকে। এই সব সমস্যা থেকে উতরানোর মতো যথেষ্ট বয়স তার থাকে। তাই কিশোর অপরাধীদের অবশ্যই শোধরানোর সুযোগ করে দিতে হবে। কারন শিশু কিশোররা হচ্ছে দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ও এরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত।

Comments

Popular posts from this blog

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা