হিজানাত:

হিজানাত:
সাধারণত শিশু সন্তানের তত্ত্বাবধান, অভিভাবকত্ব ও ভরণপোষণের বিষয়গুলি পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ ও The Guardians and Ward Act 1890 দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে, পিতা হচ্ছেন সন্তান ও সন্তানের সম্পত্তির প্রাকৃতিক ও আইনগত অভিভাবক (যদি পিতা মৃত হয়, বাবা মা তালাক প্রাপ্ত হন অথবা বাবা মায়ের সম্পর্কে টানাপোড়েন বা অন্য যে কোন কারণে সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণের প্রয়োজন হয়ে যায়, তবে আদালত কাকে দায়িত্ব দিবে?
এই প্রশ্নটির উত্তর আমাদের সবার জেনে রাখা ভাল, বিশেষ ভাবে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নারীদের জন্য এই আইনটি জানা অত্যন্ত জরুরী।
পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ অনুসারে, সাধারণত একজন শিশু সন্তানের তত্ত্বাবধানের অধিকার বা দায়িত্ব পেয়ে থাকে ঐ শিশু সন্তানটির মাতা [এই অধিকারকে বলা হয় হিজানাত (Hizanat)] যদি না তিনি:
* পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন,
* ঐ শিশু সন্তানটি সহ অন্যত্র বসবাসের জন্য চলে যান যা পিতার বসবাসের স্থান থেকে অনেক দূরে হয়,
* শিশুটিকে অবহেলা বা অযত্ন করেন,
* অনৈতিক জীবন যাপন করেন,
* ধর্ম ত্যাগ করেন,
* দুশ্চরিত্র বান হন,
* বিশ্বস্ততা হারিয়ে ফেলেন, ইত্যাদি।
এটি খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, একজন মা তার শিশু সন্তানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বা অধিকার পেয়ে থাকেন বা অভিভাবকত্ব পাবার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন, যদি:
ছেলে সন্তান হয় তবে ৭ বছর পর্যন্ত, এবং মেয়ে সন্তান হয় তবে বয়ঃসন্ধি কাল পর্যন্ত। তত্ত্বাবধানের এই সময়কাল পরে বাবা অভিভাবকত্ব পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বাবা মা নিজের সমঝোতার ভিত্তিতে যে কেউ সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারেন। আবার, নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হলে তারা আইনের সাহায্য নিতে পারেন, যেখানে সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারিত হবে আদালতের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। যদিও, এই সময়ে প্রত্যেক সন্তানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পাবার ক্ষেত্রে মা আর বাবা সমান অধিকার পেতে পারেন যদি মা অভিভাবক হিসেবে বহাল থাকতে চান।
তবে, কোন কারণে যদি মা তার শিশু সন্তানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিতে না পারেন বা উপরে বর্ণিত কোন কারণে অযোগ্য হন তবে নিম্নোক্ত সম্পর্কের ব্যক্তিগণ ঐ শিশুটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন – মায়ের মা (নানী), বাবার মা (দাদী), বোন, বোনের মেয়ে, খালা, ফুফু।
যদি এইরূপ সম্পর্কের কেউ না থাকে তবে নিম্নোক্ত সম্পর্কের ব্যক্তিগণ তত্ত্বাবধানের অধিকার পাবেন – পিতা, পিতার পিতা (দাদা), ভাই, অন্যান্য পৈত্রিক সম্পর্কের আত্মীয়, চাচা, ইত্যাদি।
যখন কোন আদালতের (পারিবারিক আদালত) সামনে প্রশ্ন আসে যে সন্তানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বা অধিকার কে পাবে তখন আদালত নিম্নোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দিবেন-
শিশুটির বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, শিক্ষা ও কার তত্ত্বাবধান শিশুটির জন্য অধিক কল্যাণকর, তত্তাবধায়কের ক্ষমতা, পিতা মাতার ইচ্ছা, (পিতা মাতা মৃত হলে) শিশুটির ইচ্ছা (যদি শিশুটির বয়স এইরূপ সিদ্ধান্ত নেয়ার বা বিবেচনার জন্য যথোপযুক্ত হয়)।
সন্তান যার তত্ত্বাবধানেই থাকুক, তার পিতা আইনগতভাবে তার সামর্থ অনুযায়ী সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবেন।

Comments

Popular posts from this blog

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা