ধর্ষণ মামলায় ‘টু ফিঙ্গার’ পরীক্ষা নিষিদ্ধ‌:

ধর্ষণ মামলায় ‘টু ফিঙ্গার’ পরীক্ষা নিষিদ্ধ‌:

বিতর্ক-আপত্তি-প্রতিবাদ বহু দিন ধরেই ছিল। অবশেষে নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কুখ্যাত ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বা দু’আঙুলের পরীক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করল।

কী এই পরীক্ষা?

সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষই মনে করেন, এই পরীক্ষাপদ্ধতি একটি মেয়ের পক্ষে অত্যন্ত অবমাননাকর। এখানে মহিলাদের যোনিমুখে আঙুল ঢুকিয়ে দেখা হয়, তাঁর হাইমেন (যোনিমুখের পর্দা) অটুট রয়েছে কি না। বহু দিন পর্যন্ত মনে করা হতো, এই পরীক্ষার মাধ্যমে একটি মেয়ের যৌন সহবাসের অভ্যাস রয়েছে কিনা তার প্রমাণ পাওয়া সম্ভব।

ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার ডাক্তারি প্রমাণ হিসেবে অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।

কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানই বলে যে, এই পরীক্ষার কোনও কার্যকারিতা নেই। কারণ শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও আরও নানা কারণে হাইমেন ছিন্ন হতে পারে। ফলে হাইমেন অটুট থাকার সঙ্গে সহবাস হয়েছে কি হয়নি, তার কোনও সম্পর্ক নেই। কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান বলছিলেন, “ওই পর্দা অন্য নানা কারণেই ছিন্ন হতে পারে। তা ছাড়া, কোনও বিবাহিতা মহিলা ধর্ষিতা হলে টু ফিঙ্গার পরীক্ষায় নতুন করে কী প্রমাণ হবে?”

এতদ্সত্ত্বেও মহিলাদের উপরে যৌন নিগ্রহের ডাক্তারি প্রমাণ সংগ্রহ করার কাজে এই পরীক্ষাটি চালু রয়েছে। বিভিন্ন নারী সংগঠন বেশ কয়েক বছর ধরে এই পরীক্ষা বন্ধ করার দাবিতে সরব ছিল। দিল্লিতে নির্ভয়ার ঘটনার পরে ধর্ষণ-বিরোধী নতুন আইন গড়ার ব্যাপারে বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বে যে কমিশন গঠিত হয়েছিল, তার সুপারিশেও এই পরীক্ষা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছর ধর্ষণ-বিরোধী যে নতুন আইন পাশ হয়েছে, তাতে এই পরীক্ষা সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়নি। নারী সংগঠনগুলি সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে কেন্দ্র বলেছিল, বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে চিন্তাভাবনা চলছে।

ঘটনা হল, নিগৃহীতাদের ডাক্তারি পরীক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করে তোলার লক্ষ্যে ২০১১ সালের নভেম্বর মাসেই একটি বিশেষজ্ঞগোষ্ঠী তৈরি করেছিল কেন্দ্র। পরবর্তী সময়ে বম্বে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতেও কেন্দ্রের উপরে এ ব্যাপারে নতুন নির্দেশিকা তৈরির দায়িত্ব বর্তায়। সেই নির্দেশিকাই এ দিন প্রকাশ করা হল।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এবং কেন্দ্রের স্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় তৈরি এই নতুন নির্দেশিকার লক্ষ্যই হল নিগৃহীতার ডাক্তারি পরীক্ষাকে যতটা সম্ভব ‘সম্মানজনক’ এবং ‘সংবেদনশীল’ করে তোলা। বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য ইন্দ্রজিৎ খান্ডেকর এ দিন বলেন, “ধর্ষিতা মহিলাদের মেডিক্যাল পরীক্ষার সময়ে হাসপাতালে অহরহ ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাঁরা ডাক্তার থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, সকলের কৌতূহলের কেন্দ্র হয়ে ওঠেন। একে টু ফিঙ্গারের মতো অমানবিক পরীক্ষা, তার উপরে বহু ক্ষেত্রেই পরীক্ষাস্থলে কোনও আব্রুর ব্যবস্থা থাকে না।” নয়া নির্দেশিকায় এই সব অব্যবস্থাই দূর করতে বলা হয়েছে।

সমস্ত রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এই নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে এখন থেকে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ফরেনসিক ও মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য একটি পৃথক ঘর চিহ্নিত করা, মেডিক্যাল পরীক্ষার সময়ে ডাক্তার এবং মহিলা অ্যাটেন্ড্যান্ট ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করা, নিগৃহীতা মেয়েটির জন্য বিকল্প পোশাকের ব্যবস্থা করা এবং যতটা সম্ভব সাবধানে এবং ব্যথাহীন প্রক্রিয়ায় নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে মহিলাদের শারীরিক পরীক্ষার নামে দফায় দফায় যে অস্বস্তির মুখোমুখি হতে হয়, তা থেকে তাঁরা অনেকটাই রক্ষা পাবেন বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি।

মহারাষ্ট্র বছর দুয়েক আগেই ওই রাজ্যে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বন্ধ করেছিল। এ বার কেন্দ্রীয় স্তরে এমন নির্দেশিকা জারি হওয়ার ফলে সমস্ত রাজ্যই তা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে। খান্ডেকর নিজে এদিন বলেন, “এটা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল।”

Comments

Popular posts from this blog

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা