আগাম জামিন বিষয়ে কিছু আলোচনা

আগাম জামিন বিষয়ে কিছু
আলোচনা
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ
অনুসারে প্রত্যেক নাগরিকের জীবন ও
ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণের অধিকার
রয়েছে, উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনে বর্নিত
বিধান ব্যতীত জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার
থেকে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে
না। আইনের আরেকটি সাধারণ নীতি হল-
“Everyone shall be presumed to be innocent
unless he is found guilty by a competent
court”. আইনের চোখে অভিযুক্ত ব্যক্তি
দোষী নয়, আসামী মাত্র।সুতরাং বিশেষ
কোন হেতু ভিন্ন কোন ব্যক্তিকে আটকের পর
আদালত আইন ও তার সু-বিবেচনা মূলক
এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে আটককৃত
ব্যক্তিকে আদালতের আদেশমত নির্দিষ্ট
স্থানে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে
হাজির হওয়ার শর্তে সাময়িক মুক্তির
ব্যবস্থা করতে পারেন যাকে আইনের চোখে
জামিন বলা হয়।
ক্রাউন বনাম খুশী মোহাম্মদ মামলায়
মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ জামিন সম্পর্কে
অভিমত ব্যক্ত করেন যে, কোন ব্যক্তিকে
পুলিশের হেফাজত থেকে মুক্ত করে
জামিনদারের হাতে অর্পন করার প্রেক্ষিতে
প্রয়োজন হলে তিনি তাকে আদালতে হাজির
করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবেন।
জামিনে মুক্তি দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হল, যে
পর্যন্ত তাকে নির্দোষ বলে গন্য করা হবে;
আদালতে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার
লক্ষ্যে পর্যাপ্ত জামিন সাপেক্ষে তাকে
অন্যান্য মুক্ত ব্যক্তির ন্যায় মুক্তি দেয়া
যাবে এবং তার মামলা তদবির করার জন্য
প্রয়োজনীয় সুযোগ দানের ব্যবস্থা দেয়া
যাবে।
ফৌজদারী কার্যবিধিতে জামিন প্রসঙ্গে ২
ধরনের অপরাধের কথা সু-স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত
হয়েছে—১) জামিনযোগ্য অপরাধ (৪৯৬ ধারা)
এবং ২) জামিন অ-যোগ্য অপরাধ।(৪৯৭ ধারা)।
এছাড়া, গ্রেফতার পূর্ব জামিন বা
anticipatory bail নামীয় আরেক ধরনের
জামিনের চর্চা হাইকোর্ট সহ দায়রা
আদালতে হতে দেখা যায়।(ধারা-৪৯৮)
ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ আইনে আগাম
জামিন সম্পর্কে সু-স্পষ্ট বিধান নেই। কিন্তু
৪৯৮ ধারায় উল্লেখিত “হাইকোর্ট বিভাগ ও
দায়রা আদালত যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন
ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুর —- নির্দেশ দিতে
পারেন।“- শব্দগুলোর সম্প্রসারিত অর্থ দ্বারা
আসামীকে ক্ষেত্রে বিশেষ জামিন প্রদান
করে থাকেন। মূলতঃ আমদের দেশের আগাম
জামিন সম্পর্কিত ৪৯৮ ধারার শিরোনামের
দিকে তাকালে দেখা যাবে, “৪৯৮। জামিন
মঞ্জুর ও জামিনের অর্থের পরিমাণ হ্রাসের
ক্ষমতা”-‘র কথা বলা হয়েছে।অর্থাৎ ওই
ধারাতে আগাম জামিনের বিধানের চেয়ে
’জামিনের অর্থের পরিমাণ হ্রাসের ক্ষমতা’-
কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু
ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ এদিক থেকে
অনেক এগিয়ে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়
ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৮/৪৩৯
ধারায় আগাম জামিন সম্প্রর্কে সু-স্পষ্ট ও
কমপ্রিহেন্সিভ বিধান রয়েছে।
আগাম জামিন
ফৌজদারী কার্যবিধির অধীনে দুই ধরনের
জামিনের চর্চা আছে, সাধারণ জামিন
(Regular Bail) যা আসামীর আটকের পর
আদালত কর্তৃক মঞ্জুর হয়; আর আরেক ধরনের
জামিন হল আগাম জামিন (Anticipatory Bail)
যা আসামীর গ্রেফতারের পূর্বে আদলত
মঞ্জুর করে থাকেন। আগাম জামিনের
আভিধানিক অর্থ গ্রেফতারের পূর্বেই প্রাপ্ত
জামিন। আর্থাৎ গ্রেফতারের পূর্বে উদ্ভূত
বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় কোন
ব্যাক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট
মামলায় আদালত আটককৃত ব্যক্তিকে যে
জামিন মঞ্জুর করে থাকেন তাকেই আগাম
জামিন বলা হয়।
আগাম জামিনের প্রয়োজনীয়তা
পূর্বে শত্রু পক্ষের কাউকে দমিয়ে রাখার
জন্য যাদু-টোনা করা হত বলে শুনেছি;
বর্তমানে যাদু-টোনার সেই স্থান দখল করে
আছে মিথ্যা মামলা। যদি কোন ব্যক্তি
প্রকৃতপক্ষে অপরাধী না হন তাহলে বিচারের
পূর্বে গ্রেফতার ও কারাগারে দূর্বিসহ বন্দী
জীবন কাটাতে বাধ্য করা ভিন্ন অর্থে
অপরাধ প্রমানের আগেই শাস্তি ভোগ করতে
বাধ্য করার নামান্তর। এবং এক্ষেত্রে
আদালতই এ সকল নিরীহ মানুষগুলোর শেষ
ভরসাস্থল। সুতরাং যে ক্ষেত্রে আসামী
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যে ক্ষেত্রে
আসামীর এরুপ অপরাধে জড়িত হবার কোন
স্বাক্ষর নেই বা আসামীর জামিনে মুক্তির
পর পলায়নের কোন সম্ভাবনা নেই বা তাঁকে
আইন শৃখলা বাহিনীর হেফাজতে নিয়ে
জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপক কোন কারন নেই,
সে ক্ষেত্রে আসামীকে গ্রেফতারের পূর্বেই
জামিনে মুক্তি দিতে আদালত কার্পন্য
করবেন না।
আগাম জামিনের আইনি বিধানের
পরীক্ষা
মূলতঃ ‘আগাম জামিন’ প্রত্যয়টিকে কিছু
ক্ষেত্রে সমালোচকগন Misnomer বা ভূল
ভাবে সংজ্ঞায়িত একটি প্রত্যয় হিসাবে
অনেকে ব্যখ্যা করেন। কারণ,তাদের প্রশ্ন হল
জামিনের অধিকারের সূত্রপাত কখন ঘটবে? –
আসামী যখন আইন শংখলা বাহিনীর আইনগত
হেফাজতে(Lawful Custody) থাকবে তখন
থেকে। সেই হিসাবে কোন ব্যক্তি
গ্রেফতারের পূর্বেই যখন জামিনের আবেদন
করেন তখন তাকে Misnomer না বলে পারা
যায় না। তবে, আমার হিসাবে যখন কোন
ব্যক্তি আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন তখন
তিনি মূলত আদালতের কাছে নিজেকে
সমর্পণ করছেন এবং পরিস্থিতি বিবেচনায়
নিজের মুক্তির জন্য আদালতের কাছে
আর্জি জানাচ্ছেন যার কারণে গ্রেফতারের
পূর্ব থেকেই জামিন অনুমোদনের হিসাবে
তথাকথিত অর্থে Misnomer বলা অনেকাংশে
সমীচীন নয়।
যাই হোক,ভারতীয় সংবিধান সর্বপ্রথম যখন
বলবৎ হয়েছিল ফৌজদারী কার্যবিধিতে তখন
আমাদের দেশের মত আগাম জামিনের কোন
সুস্পষ্ট বিধান ছিল না। সুতরাং আইনের
অনুপস্থিতিতে, গ্রেফতারের পূর্বে কোন
ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া উচিৎ কিনা এ
প্রশ্নে Varkey Paily Madthikudiyil (1967)-
মামলায় কেরালা হাইকোর্ট মন্তব্য
করেছিলেন,” যতক্ষন না কোন ব্যক্তিকে
আটক আর্থাৎ লিগ্যাল কাস্টডিতে রাখা না
হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জামিন মঞ্জুর করা
যায় না।
Kartar Singh v. State of Panjab ,মামলায়
পাঁচজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত ভারতীয়
সুপ্রিম কোর্টের একটি সাংবিধানিক
বেঞ্চে উত্তর প্রদেশের একটি আইনের
বৈধতা যাচাই করা হয় এই মর্মে যে,
আইনটিতে আগাম জামিনের
প্রয়োগযোগ্যতার বিষয়ে কোন বিধান ছিল
না। Constitutional Bench- উল্লেখ করেন যে,
আগাম জামিনের বিধান বাতিল করা হয়েছে
শুধু এই কারণে বলা যাবে না যে, উক্ত
বাতিলের মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক
অধিকারের চর্চাকে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতে সংবিধানের সাথে সংগতি
বজায় রেখে রাজ্য সমূহ কেন্দ্রীয়
কার্যবিধিকে ভিত্তি ধরে তাদের নিজস্ব
কার্যবিধি সংক্রান্ত আইন গ্রহণ করতে
পারে।
আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে
আদালতের বিবেচ্য বিষয়াবলী
সাধারণভাবে, জামিন অযোগ্য মামলায়
জামিন আবেদনের শুনানী প্রসঙ্গে আদালত
যে সকল বিষয় বিবেচনা করবেন আগাম
জামিনের ক্ষেত্রে ও আদালত একই বিষয়
সমূহ বিবেচনা করবেন। [19 DLR 39 (SC)] যাই
হোক,আগাম জামিনের বিষয় সাধারণ
জামিনের বিষয় থেকে একটু হলেও ভিন্ন
এবং আগাম জামিনের আবেদন
বিবেচনাকালে আদালত মোটাদাগে নিন্ম
লিখিত বিষয় সমূহ বিবেচনা করতে পারেনঃ
১। উত্থাপিত আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং
তর্কিত অভিযোগের নিবিড় বিবেচনায়
আদালতের কাছে যদি এটি প্রতীয়মান হয়
যে, আসামীকে উক্ত মামলায় কোন খারাপ
উদ্দেশ্যে জড়ানো হয়েছে এবং ওই মামলায়
গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে সামাজিক
ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা
হয়েছে অথবা আসামীকে উক্ত মামলার
মাধ্যমে ক্ষতির মুখোমুখি করাই একমাত্র
উদ্দেশ্য তাহলে আদালত তাঁকে গ্রেফতারের
পূর্বেই নিজ বিবেচনায় জামিন মঞ্জুর করতে
পারেন।
২। আদালত আগাম জামিনের ক্ষেত্রে একটা
অ-স্পষ্ট ও অ-নিদৃষ্ট(Blanket Order) মঞ্জুর
নামা জারি করবেন না। আদালত এক্ষেত্রে
সুনিদৃষ্ট অপরাধ ও অভিযোগ ও তৎপ্রসঙ্গে
আবেদননামা বিবেচনা করতঃ শ্বুধুমাত্র তার
ভিত্তিতেই জামিন মঞ্জুর করবেন। [ G. V.
Prabhu v. State, (1975) CrlJ 1339-40 (goa)]
৩। আগাম জামিন মঞ্জুরের পূর্বে আদালত
এটিই বিবেচনায় রাখবেন যে, উক্ত মামলায়
জিজ্ঞাসাবাদ বা তথ্য উধঘাটনের জন্য
আসামিকে পুলীশ হেফাজতে নেবার
প্রয়োজন রয়েছে কিনা? যদি এরুপ প্রয়োজন
বিবেচিত হয় তাহলে আদালত জামিন না-
মঞ্জুর করতে পারেন।
৪। আদালতের আগাম জামিনের ক্ষমতাকে
বলা হয় ‘Power of Extra Ordinary Nature)।
সুতরাং, এটি বিশেষ প্রেক্ষাপট বিবেচনায়
ব্যবহার করা উচিৎ। যদি আদালত এটি
উপলব্ধি করেন যে, আসামী তার জামিনের
সুযোগের অপব্যবহার করবেন না বা মামলা
প্রভাবিত করবেন না সে ক্ষেত্রে আদালত
আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।
৫। আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে
আসামীকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হতে
হবে। আগাম জামিনের আবেদন সাধারণত
তাদের ক্ষেত্রে না-মঞ্জুর করা হয় যারা
তদন্তকারী সংস্থাকে সহায়তা করেন না বা
করার সম্ভাবনাও ক্ষীন, অথবা যাদেরকে
‘Custodial Interrogation’ প্রয়োজন অথবা
যারা জামিনে মুক্ত থেকে মামলা প্রভাবিত
করতে পারেন।
৬। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের আমল
গ্রহণ করার পর এমন কি চার্জশীট দেওয়ার
পরও আগাম জামিন মঞ্জুর করা যায় [Ravindra
Saxena’s Case(2010) 1 SCC 684]। যদিও ভারতে
H.D.F.C-মামলায় (2009) Reported as 2010 1
SCC 679 মামলায় ভিন্নমত পাওয়া যায়। এই
মামলায় আদালত মন্তব্য করেন, “Once the
accused in the Charge Sheet, he has to
surrender to the custody of the Court and pray
for regular bail.” অর্থাৎ, একবার আসামীর
বিরুদ্ধে চার্জশীট দেওয়া হলে তাকে নিন্ম
আদালতে আত্নসমর্পন পূর্বক নিয়মিত জামিন
চাইতে হবে। আমদের দেশে অবশ্য মামলার
উভয় পর্যায়ে আদালত বিবেচনা প্রসূত আগাম
জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।
৭। এজাহার দায়ের করা আগাম জামিনের
পূর্ব শর্ত নয়। মামলায় চার্জশীট প্রদান করা
হয়েছে বা আসামীকে গ্রেফতারের জন্য
ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে- শুধুমাত্র এই
গ্রাউন্ডেই আসামীর আগাম জামিনের
অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলা যাবে না।
উপরোক্ত বিষয়সমূহ সহ অন্য অনেক বিষয়ের
মধ্যে আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে
আদালত প্রধাণত নিন্মলিখিত বিষয়গুলো
বিবেচনা করে থাকেন—
১। অভিযোগের প্রকৃতি ও ভয়াবহতা;
২। আবেদনকারীর পূর্বপরিচয় সেই সাথে
আবেদনকারী পূর্বে কখনও আমলযোগ্য
অপরাধে দন্ডিত হয়েছিল কিনা সেম্পর্কে
তথ্যাদি;
৩। জামিন পেলে আসামীর পলায়নের কোন
সুযোগ ও সন্দেহ আছে কিনা?;
৪। আসামীর গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে
সমাজের চোখে হেয় করা হবে- এমন উদ্দেশ্য
নিয়ে উক্ত মামলায় তাকে জড়িত করা
হয়েছে কিনা এ মর্মে অভিমত।
অন্যান্য বিষয়ের সাথে উপরোল্লিখিত
নিয়ামক সমূহ বিবেচনা পূর্বক পরিস্থিতি
বিবেচনায় আদালত কোন মামলায় আসামীর
আগাম জামিন মঞ্জুর বা না- মঞ্জুর করে
থাকেন। এবং যেক্ষেত্রে আসামীর আগাম
জামিনের দরখাস্ত না-মঞ্জুর করেন
সেক্ষত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা আসামীকে গ্রেফতার করতে
পারবেন।
আগাম জামিন আদেশের বলবতযোগ্যতার
মেয়াদকাল
আমাদের দেশে সাধারণত জামিন মঞ্জুর
কালে আগাম জামিনের মেয়াদ উল্লেখ করে
দেওয়া হয় উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ৪ বা ৬
সপ্তাহের জন্য ইত্যাদি। সুতরাং মেয়াদ শেষ
হবার পূর্বে জামিনের মেয়াদ আদালত কর্তৃক
বৃদ্ধি করা না হলে উক্ত মেয়াদান্তে জামিন
বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া, আদালত ইচ্ছা
করলে এবং যুক্তি সঙ্গত মনে করলে মঞ্জুরকৃত
জামিন আদেশ বাতিল করতে পারেন।
এক অপরাধের জন্য আগাম জামিন পেলে
আসামীকে অন্য অপরাধের জন্য গ্রেফতার
করা যাবে কিনা?
পূর্বেই বলা হয়েছে, আগাম জামিনের
আবেদন করা হয় সু-নিদৃষ্ট কোন মামলা বা
ঘটনা থেকে উদ্ভূত অভিযোগের প্রেক্ষিতে
গ্রেফতারের আশঙ্কা থেকে। সুতরাং, আগাম
জামিন কোন এক বিশেষ ঘটনা বা মামলাকে
সামনে রেখে আদালত কর্তৃক মঞ্জুর হয়।
সুতরাং, সুস্পষ্টভাবে আসামীর যদি অন্য
কোন আমল যোগ্য অপরাধে জড়িত থাকার
প্রমাণ পাওয়া যায় যার জন্য তাকে জামিন
মঞ্জুর করা হয় নি – এমন মামলায় তাকে
গ্রেফতার করতে কোন আইনী বাঁধা নেই।
Gurbaksh Sing Sibia v. State of Panjab, AIR
(1978) P&H 1 মামলায় আদালত বলেন যে,
“The exercise of power under this section is
with regard to a specific accusation and
cannot be extended in blanket fashion to
cover all offences which the petitioner may
come to be charged.”
সুপারিশঃ
১। ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করে এই
আইনকে আরো যুগোপযোগী করা; এ লক্ষ্যে
আগাম জামিন সম্পর্কে সু-স্পষ্ট আইন
ফৌজদারী কার্যবিধিতে সন্নিবেশিত করা
উচিৎ। উল্লেখ্য, ভারত ১৯৭৩ সালে নতুন করে
তাদের ফৌজদারী কার্যবিধি গ্রহণ করেছে।
শুধু তাই নয় ২০০৫ সালে আগাম জামিন
সম্পর্কে তাদের আইনে সংশোধনী ও আনয়ন
করেছে যেখানে আমরা এখন ও ১৮৯৮ সালে
পড়ে রয়েছি।
২। যত্রতত্র আগাম জামিন মঞ্জুর করা উচিৎ
নয়; যদিও আমাদের আদালত সমূহ এ বিষয়ে
বেশ সচেতন তার পরেও অনেক ক্ষেত্রে উদার
ভাবে আগাম জামিনের ব্যবহারের ফলে
পেশাদারী আসামীগন মিথ্যা তথ্য দিয়ে
আদালত থেকে জামিন নেয় এবং অপরাধ
কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
৩। আগাম জামিন সম্পর্কে এর অপব্যাবহার
রোধকল্পে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এ মর্মে আদালত প্রাথমিক শুনানিতেই
আসামীর পক্ষে আগাম জামিন সম্পর্কে কোন
স্থির সিদ্ধান্তে আসা থেকে বিরত রাখার
জন্য আইনী বিধান গ্রহণ প্রয়োজন। এ
বিবেচনায় প্রসিকিউশনকে আগাম জামিনের
বিরোধিতার জন্য তার কেস উপস্থাপনের
জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান করা উচিৎ।
৪। রাষ্ট্র পক্ষকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে
আগাম জামিন মঞ্জুর করা উচিৎ নয়;
এক্ষেত্রে আসামী পক্ষের আবেদনের
প্রেক্ষিতে হয়ত প্রাথমিক শুনানির দিন
অর্ন্তবর্তী কোন আদেশ দিতে পারেন কিন্তু
উক্ত আদেশকে চূড়ান্ত করার পূর্বে অবশ্যই
আদালত বাদী বা রাষ্ট্রপক্ষকে নোটিশ
পূর্বক(যা কমপক্ষে সাত থেকে দশ দিনের কম
হবে না) শুনানির সুযোগ দেওয়া উচিৎ।
৫। প্রাথমিক শুনানির পর নোটিশের মাধ্যমে
আদালতের ধার্য্য তারিখে রাষ্ট্র বা বাদী
পক্ষ যেদিন শুনানিতে অংশ গ্রহণ করবেন
সেদিন আসামী হাজির থাকবেন যাতে করে
আসামী আইনের আওতাভূক্ত থাকতে পারে।
এর অন্যতম আরেকটি উদ্দেশ্য আছে সেটি হল
আসামী যাতে করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে
জামিন নিয়ে পলায়ন না করতে পারে বা
মামলার তদন্ত কাজে বাঁধা প্রদান না করতে
পারে।

Comments

Popular posts from this blog

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা