মুসলিম উত্তরাধিকার আইন

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন
*******************************
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন কনটেন্টটিতে উত্তরাধিকারের শ্রেণিবিভাগ, প্রাপ্ত সম্পত্তির পরিমাণ, ত্যাজ্য সন্তানের উত্তরাধিকার, স্বামী-স্ত্রীর প্রাপ্ত সম্পত্তির পরিমাণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন :
আকরাম ৪০ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। রেখে গেল বাবা, স্ত্রী রেহানা, দুই ভাই ও এক মেয়ে মিতা। আকরাম কৃষিকাজ করত। তার প্রায় ১০ বিঘা জমি ও বসত বাড়ি ছিল। আকরামের মৃত্যুর পর আকরামের ভাই সাইদ আকরামের স্ত্রী রেহানাকে বলে যে আকরামের সম্পত্তিতে রেহানা ও তার মেয়ে মিতার কোন অধিকার নেই। সাইদ তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। অসহায় রেহানা কি করবে বুঝতে পারে না। সে তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। রেহানার বাবা উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে জানত না। রেহানার বাবা রেহানাকে নিয়ে উকিলের কাছে যান পরামর্শের জন্য। উকিল তাদেরকে উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে অনেক তথ্য দেন।
উকিল : মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী আকরামের সম্পত্তিতে রেহানা ও তার মেয়ে মিতার অধিকার আছে।
রেহানা : উত্তরাধিকার কি ?
***********************
উকিল : কোন নারী বা পুরুষের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে মৃতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের খরচ, দেনাশোধ বা মৃতব্যক্তি যদি কোন উইল সম্পাদন করে যান তবে তা হস্তান্তরের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে তার উপর মৃতের সন্তান সন্তানাদি ও আত্মীয় স্বজনের যে অধিকার জন্মায় তাকে উত্তরাধিকার বলে।
রেহানা : উত্তরাধিকার আইন কি ?
**************************
উকিল : যে নির্দিষ্ট আইন দ্বারা মৃতের সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হয় তাকে উত্তরাধিকার আইন বলে।
রেহানা : মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে উত্তরাধিকারীর শ্রেণীবিভাগ কিভাবে হয় ?
*************************************************************
উকিল : মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে ৩ শ্রেনীর উত্তরাধিকার আছে। যেমন : অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী, দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ।
রেহানা : অংশীদার কারা ?
**********************
উকিল : যে উত্তরাধিকারীদের অংশ কোরআনে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তারাই অংশীদার।
রেহানা : অবশিষ্টাংশভোগী কারা ?
***************************
উকিল : কোরআনে নির্দিষ্ট অংশীদারদের সম্পত্তি বন্টনের পর মৃতের সাথে যাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এবং অবশিষ্ট সম্পত্তিতে যাদের অধিকার রয়েছে তারাই অবশিষ্টাংশ ভোগী।
রেহানা : দূরবর্তী আত্মীয়দের মধ্যে কারা সম্পত্তি পাবে ?
******************************************
উকিল : যাদের সাথে মৃতের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তারা অংশীদার বা অবশিষ্টাংশভোগী নয় তারাই মৃতের দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ। যদি মৃতের অংশীদার এবং অবশিষ্টাংশ ভোগী উত্তরাধিকার না থাকে তাহলেই কেবল মৃতের দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ সম্পত্তি পাবেন।
রেহানা : মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী আমি কি সম্পত্তির উত্তরাধিকার ?
**************************************************************
উকিল : মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে ৩ শ্রেণীর মধ্যে অংশীদারগণই প্রধান উত্তরাধিকার। কোরআনে নির্ধারিত অংশ তাদেরকে দেয়ার পর যদি সম্পত্তি থাকে তবে তা অন্যদের মধ্যে বন্টন করতে হবে অর্থাৎ অংশীদারগণ সকল উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অগ্রাধিকার পান। অংশীদারগণের মধ্যে স্ত্রী অন্যতম। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নিচের ৬ জন কোন অবস্থায়ই উত্তরাধিকার হতে বাদ যায় না-
পিতা
মাতা
ছেলে
মেয়ে
স্বামী
স্ত্রী
উল্লেখ্য, স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রী এবং স্ত্রীর অবর্তমানে স্বামী সম্পত্তি পাবেন।
রেহানা: মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে আর কে কে অংশীদার আছেন?
***************************************************
উকিল: মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মোট ১২ জন অংশীদার আছেন। তাদের ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জন নারী। পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, কন্যাসহ অন্যরা হলেন-দাদা, পুত্রের কন্যা, দাদী বা নানী, আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় ভাই, বৈপিত্রেয় বোন।
রেহানা : মৃতের বাবা কতটা সম্পত্তি পায় ?
***********************************
উকিল : মৃত ব্যক্তির পিতা উত্তরাধিকার লাভে তিন অবস্থায় পড়তে পারেন-
ক. মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র বা পুত্রের পুত্র, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে বাবা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
খ. পুত্র, পুত্রের পুত্র না থাকলে কিন্তু কন্যা, পুত্রের কন্যা থাকলে ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন এবং তাদের দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তাও পাবেন।
গ. মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে অন্যান্য অংশীদারদের দেয়ার পর বাকী সমস্ত সম্পত্তি পিতা পাবেন।
রেহানা : মৃতের মাতা কতটা সম্পত্তি পায় ?
********************************
উকিল : মৃত ব্যক্তির মাতা তিনভাবে উত্তরাধিকার লাভ করতে পারেন-
ক. মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে অথবা যদি পূর্ণ, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন।
খ. কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকলে এবং যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) পাবেন।
গ. কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তি স্বামী বা স্ত্রী হয়, তবে তার স্বামী বা স্ত্রী, মাতা ও পিতা উত্তরাধিকারী হলে সেই স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন।
রেহানা : স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তি কতটা পাবেন ?
**********************************
উকিল : স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন-
ক. সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির চারভাগের একভাগ (১/৪) পাবেন।
খ. যদি সন্তান বা সন্তানের সন্তান, যত নিম্নের হউক, না থাকে তাহলে স্বামী মোট সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ (১/২) পাবেন।
রেহানা : স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি কতটা পাবেন ?
**********************************
উকিল : স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন-
ক. সন্তান বা পুত্রের সন্তান, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) পাবেন।
খ. যদি সন্তান না থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) পাবেন। এখানে উল্লেখ্য, যদি মৃতের একাদিক স্ত্রী থাকেন তাহলে কোরআনে বর্ণিত অংশ স্ত্রীদের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হবে।
রেহানা : ছেলে মৃত বাবার সম্পত্তি কতটুকু পাবেন ?
*****************************************
উকিল : মৃত ব্যক্তির ছেলে / ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি লাভ করবেন। যেক্ষেত্রে মৃতব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে বর্তমান সেক্ষেত্রে ছেলে/ ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের দ্বিগুন সম্পত্তি পাবেন। মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে পাবে।
রেহানা : মেয়ে মৃত বাবার সম্পত্তি কতটুকু পাবেন ?
*******************************************
উকিল : উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মেয়ে তিনভাবে সম্পত্তি পেতে পারেন-
ক. একজন কন্যার অংশ দুইভাগের একভাগ (১/২)
খ. একাধিক মেয়ে হলে সকলে মিলে সমানভাবে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) পাবে।
গ. যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে।
উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে জানার পর রেহানা তার অংশের সম্পত্তির দাবি করেন। সে আকরামের সম্পত্তির ১/৮ বা ৩/২৪ অংশ পায়, মিতা পায় সম্পত্তির ১/২ বা ১২/২৪ অংশ এবংবাবা অংশীদার হিসেবে ১/৬ বা ৪/২৪অংশ ও অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে ৫/২৪ অংশ (বাবা মোট পায় ৯/২৪ অংশ)। বাবা থাকায় এক্ষেত্রে ভাইয়েরা কোন সম্পত্তি পায় নি। উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকার কারণে তারা তাদের সম্পত্তি পায়। এই সম্পত্তি থেকে রেহানা বর্তমানে নিজেদের থাকা খাওয়ার খরচ ও মিতার পড়ালেখার খরচ করতে পারছে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১. একজন মুসলিম নারী বা পুরুষকে কি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য ত্যাজ্য করা যায় ?
****************************************************************************
উত্তর. না, একজন মুসলিম নারী বা পুরুষকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা বা ত্যাজ্য ঘোষণা করা যায় না।
প্রশ্ন ২. মৃত ব্যক্তির ছেলে না থাকলে মেয়ে কি সম্পূর্ণ সম্পত্তি পাবে ?
****************************************************
উত্তর. না, যদি মেয়ে সন্তান একজন হয় তবে মৃত ব্যক্তির মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে (১/২), একাধিক মেয়ে হলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই (২/৩) ভাগ পাবে। তবে যদি মৃতব্যক্তি জীবিত অবস্থায় মেয়েকে বা মেয়েদেরকে সম্পূর্ণ সম্পত্তি দান করে যায় তাহলে মেয়েরা সম্পূর্ণ সম্পত্তি পাবে।
প্রশ্ন ৩. মেয়েরা কি মায়ের সম্পত্তি ছেলের চাইতে বেশি পায় ?
**************************************************
উত্তর. না, মেয়েরা সবসময়ই ছেলের চাইতে অর্ধেক সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তি মা বা বাবা যেই হোক না কেন উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে একজন পুত্র, একজন কন্যার দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে।
প্রশ্ন ৪. সৎ ছেলে মেয়েরা কি বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাবেন ?
**********************************************************************
উত্তর. না, কোন সৎ ছেলে-মেয়ে, সৎ বাবা-মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন না। এমন কি সৎ বাবা-মাও সৎ ছেলে-মেয়ের সম্পত্তির উত্তররাধিকারী হবেন না।
রেহানা : কেউ যদি সন্তানকে ত্যাজ্য করে তাহলে এই সন্তান কি সম্পত্তি পাবে ?
*************************************************************
উকিল : মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য করা যায় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিতও করা যায় না। তবে কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে গেলে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে গেলে ঐ সন্তান সম্পত্তি পাবে না।
উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে জানার পর রেহানা তার অংশের সম্পত্তির দাবি করেন। সে আকরামের সম্পত্তির ১/৮ বা ৩/২৪ অংশ পায়, মিতা পায় সম্পত্তির ১/২ বা ১২/২৪ অংশ এবংবাবা অংশীদার হিসেবে ১/৬ বা ৪/২৪অংশ ও অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে ৫/২৪ অংশ (বাবা মোট পায় ৯/২৪ অংশ)। বাবা থাকায় এক্ষেত্রে ভাইয়েরা কোন সম্পত্তি পায় নি। উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকার কারণে তারা তাদের সম্পত্তি পায়। এই সম্পত্তি থেকে রেহানা বর্তমানে নিজেদের থাকা খাওয়ার খরচ ও মিতার পড়ালেখার খরচ করতে পারছে।
তথ্যসূত্র
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১. একজন মুসলিম নারী বা পুরুষকে কি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য ত্যাজ্য করা যায় ?
উত্তর. না, একজন মুসলিম নারী বা পুরুষকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা বা ত্যাজ্য ঘোষণা করা যায় না।
প্রশ্ন ২. মৃত ব্যক্তির ছেলে না থাকলে মেয়ে কি সম্পূর্ণ সম্পত্তি পাবে ?
উত্তর. না, যদি মেয়ে সন্তান একজন হয় তবে মৃত ব্যক্তির মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে (১/২), একাধিক মেয়ে হলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই (২/৩) ভাগ পাবে। তবে যদি মৃতব্যক্তি জীবিত অবস্থায় মেয়েকে বা মেয়েদেরকে সম্পূর্ণ সম্পত্তি দান করে যায় তাহলে মেয়েরা সম্পূর্ণ সম্পত্তি পাবে।
প্রশ্ন ৩. মেয়েরা কি মায়ের সম্পত্তি ছেলের চাইতে বেশি পায় ?
উত্তর. না, মেয়েরা সবসময়ই ছেলের চাইতে অর্ধেক সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তি মা বা বাবা যেই হোক না কেন উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে একজন পুত্র, একজন কন্যার দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে।
প্রশ্ন ৪. সৎ ছেলে মেয়েরা কি বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাবেন ?
উত্তর. না, কোন সৎ ছেলে-মেয়ে, সৎ বাবা-মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন না। এমন কি সৎ বাবা-মাও সৎ ছেলে-মেয়ের সম্পত্তির উত্তররাধিকারী হবেন না।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে অংশ বের করার নিয়ম: আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে অংশীদারেরা তাদের নির্দিষ্ট অংশ অনুযায়ী সম্পত্তি লাভ করে থাকে। নির্দিষ্ট অংশ প্রাপকদের কোরানিক অংশ অনুযায়ী ভাগ করতে হবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি প্রথমে অংশীদারদের মধ্যে তালিকা অনুযায়ী অংশ দিতে হবে। অতঃপর যদি সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে, তাহলে বন্টনের নিয়মানুসারে অবশিষ্টাংশভোগীদের মধ্যে বন্টন করতে হবে।
উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। প্রথমতঃ উত্তরাধিকারীদের বন্টিত অংশের যোগফল অবশ্যই এক হতে হবে। দ্বিতীয়ত: অংশীদারগণের নিজেদের অংশের কোন পরিবর্তন না করে যোগফল এক করতে হবে।
কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত অংশের যোগফল তিনরকম হতে পারে। যেমন: (১)
এটা এক (unique) পারে; (২) এটা এক এর বেশী হতে পারে; অথবা (৩) এটা এক এর কম হতে পারে। যোগফল এক হলে কোন সমস্যা থাকে না। কিন্তু যোগফল এক এর বেশী হলে অংশীদারদের নিজেদের কোনরকম অংশের পরিবর্তন না করে একে এক করতে হব। অংশীদারদের অংশ বন্টনের পর অবশিষ্ট ভোগীদের তালিকার ক্রমানুসারে প্রদান করতে হবে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে অবশিস্টভোগী সব পুত্র+কন্যা, ভাই+বোন, বৈমাত্রেয় ভাই + বৈমাত্রেয় বোন, পুত্রের পুত্র + পুত্রের কন্যা থাকলে উভয়ই ২:১ অনুপাতে অবশিষ্ট ভোগী হবে।
সম্পত্তি বন্টনে আউল বা উত্তরণ নীতি:
আউল শব্দের অর্থ বৃদ্বি বা increase অংশীদারদের নিজেদের অংশ বন্টনের পরে, যদি মোট পরিমাণ এক না হয়ে এটা অতিক্রম করে তবে সেক্ষেত্রে বৃদ্বির বা আউলের মতবাদ প্রয়োগ হয়। অংশগুলো একত্রে যোগ করলে যোগ করলে যোগফলের ভগ্নাংশের 'লব' (numerator ) দ্বারা অংশের মোট সংখ্যা বোঝাবে এবং 'হর' (denomenator) দ্বারা উত্তরাধিকার যোগ্য সম্পত্তির) মোট ভাগ বা টুকরার পরিমাণ বোঝাবে। যদি বন্টিত অংশের পরিমাণ ১৩/১২ হয়, তখন ১৩ দ্বারা অংশের সংখ্যা বোঝাবে এবং ১২ দ্বারা সম্পত্তির বিভক্তি বা খন্ডের সংখ্যা বোঝাবে। এক্ষেত্রে সম্পত্তির টুকরা বা খন্ডের চাইতে এতে প্রাপ্য অংশের পরিমাণ বেশী হয়েছে। অন্য কথায় অংশীদারদের অংশের পরিমানের চাইতে সম্পত্তি কম। অংশীদারদের স্ব স্ব অংশের কোনরকম পরিবর্তন না করে একে এককরার যে নীতি প্রয়োগ করা হয় তাই আউল নীতি (doctrine of Aul) নামে পরিচিত। এই নীতি অনুযায়ী অংশীদারদের অংশসমূহ তাদের অনুপাতে কমিয়ে এদের যোগফল এক করা হয়। আউল নীতি প্রয়োগের সহজ পদ্বতিটি নিম্নরূপ:
সবসময় অংশীদারদের মধ্যে তাদের নির্দিষ্ট অংশ বন্টন করতে হব।
মুসলিম উত্তরাধিকারের বন্টন সম্পর্কে কোন এক ব্যক্তি হযরত আলী (রাঃ) কে প্রশ্ন করেছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) মিম্বারের উপর দাঁড়িযে খোতবা পাঠ করছিলেন এবং এমতাবস্থায় ঐ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন । সে কারণে এর নামকরণ হয় 'মিম্বারিয়া ফারায়েজ' যার মাধ্যমে আউল নীতির উদ্ভব হয়। হযরত আলী (রাঃ) এর কাছে নিমোক্ত সমস্যাটির উদ্ভব হয়েছিল যার সমাধান তিনি নিম্নোক্ত উপায়ে করেছিলেন:
স্ত্রী = ১/৮ অংশ = ৩/২৪ কমিয়ে = ৩/২৭
২ টি কন্যা একত্রে = ২/৩ অংশ = ১৬/২৪ কমিয়ে =১৬/২৭
পিতা = ১/৬ অংশ = ৪/২৪ কমিয়ে = ৪/২৭
মাতা = ১/৬ অংশ = ৪/২৪ কমিয়ে = ৪/২৭
.........................................................................
যোগফল = ২৭/২৪ =১
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন উপরোক্ত উদাহরণ ২৪ এর আউল বা বৃদ্ধি একটি সংখ্যায় ২৭ হয়ে থাকে এবং যেক্ষেত্রে এই আউল হয়েছ।
আউলের উদাহরণ (১):
মনে করি অংশীদারেরা হচ্ছেন স্বামী এবং দুই আপন বোন। আইনানুযায়ী স্বামী ১/২ এবং দুই বোন ২/৩ অংশ সম্পত্তি পায়। তাদের মাঝে বন্টিত অংশসমূহ যোগ করলে যোগফল ১/২ + ২/৩ = ৩/৬ + ৪/৬ = ৭/৬। এটি এক এর চেয়ে বেশী। এখানে ভগ্নাংশের 'লব' ৭ অর্থাত্‍ বন্টিত সম্পত্তির অংশের মোট সংখ্যা এবং 'হর' ৬ অর্থাত্‍ সম্পত্তির মোট খন্ড অর্থাত্‍ ভাগ নির্দেশ কর। এমতাবস্থায় 'লব' ৭ কে অপরিবর্তিত রেখে একে সাধারণ হর গন্য করলে সমস্যার সমাধান হয় । অর্থাত্‍ সম্পত্তির মোট ভাগের / খন্ডের সংখ্যা ৬ কে এমনভাবে বাড়াতে হবে যাতে তা অংশসমুহের মোট সংখ্যা ৭ এর সমান হয়, হর ৬ এর সাথে ১ যোগ করলেই তা লব ৭ এর সমান হয় অর্থাত্‌ ভগ্নাংশটি দাঁড়ায় ৭/৭ বা এক।
উদাহরণটিকে নিম্নরুপে দেখানো যায়:
স্বামী - ১/২ =৩/৬ এর হর ৬ এর স্থলে ৭ করে = ৩/৭
দুই আপন বোন - ২/৩ = ৪/৬ এর হর ৬ এর স্থলে ৭ করে = ৪/৭
তাহলে সর্বমোট = ৭/৭ =১ ( মোট সম্পত্তি )
আউলের উদাহরণ (২): মনে করি একজন হানাফী মুসলিম স্বামী - ১ জন স্ত্রী, পিতা, মাতা ও ২কন্যাকে রেখে মারা যান। তাদের মাঝে সম্পত্তি বন্টন নিম্নরূপ হবে:
স্ত্রী = ১/৮ বা ৩/২৪
পিতা = ১/৬ বা ৪/২৪
মাতা = ১/৬ বা ৪/২৪
২কন্যা = ২/৩ বা ১৬/২৪
সর্বমোট = ২৭/২৪ যা মোট সম্পত্তির তুলনায় বেশী হয়
এই অবস্থায় আউল করে মোট সম্পত্তি ভাগ করে দেখানো যায়:
স্ত্রী = ১/৮ বা ৩/২৪ আউল করে =৩/২৭
পিতা = ১/৬ বা ৪/২৪ আউল করে = ৪/২৭
মাতা = ১/৬ বা ৪/২৪ আউল করে = ৪/২৭
২ কন্যা = ২/৩ বা ১৬/২৪ আউল করে = ১৬/২৭
এখন সর্বমোট সম্পত্তি = ২৭/২৭ = ১
আউলের উদাহরণ (৩): একজন সুন্নী মুসলমান তার ক) স্বামী খ) মাতা গ) কন্যা ও ঘ) পুত্রের কন্যা রেখে মারা গেল। এক্ষেত্রে তাদের অংশের সমষ্টি এক বা ঐক্যের বেশী হওয়ায় আউলের নীতি প্রয়োগ করা হলো ।
স্বামী = ১/৪ বা ৩/১২ আউল করে = ৩/১৩
মাতা = ১/৬ বা ২/১২ আউল করে = ২/১৩
কন্যা = ১/২ বা ৬/১২ আউল করে = ৬/১৩
পুত্রের কন্যা = ১/৬ বা ২/১২ আউল করে = ২/১৩
........... ..............
= ১৩/১২ এখন সর্বমোট ১৩/১৩ =১
অংশীদারদের মাঝে তাদের সম্পত্তি পুরোপুরিভাবে নির্দিষ্ট অংশ বন্টন করা হয়েছে। অংশীদারদের অংশসমুহকে একই হর বিশিষ্ট ভগ্নাংশে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ভগ্নাংশগুলো একত্রে যোগ করলে দেখা যায় যোগফল ১৩/১২ অর্থাত্‍ লব হরের চেয়ে ১ বেশী। তাই আউলের নীতি প্রয়োগ করে এই 'লব' ১৩ কে ভগ্নাংশসমুহের সাধারণ হর হিসেবে গন্য করা হয়েছ। এই সাধারণ 'হর' ১২ ব্যবহার করার ফলে স্বামী, মাতা, কন্যা ও পুত্রের কন্যা অংশসমুহ কমে যথাক্রমে ৩/১৩,২/১৩, ৬/১৩, ২/১৩ হয়েছ।
এটি চুড়ান্ত বন্টন। 'আউল' - এর আক্ষরিক অর্থ বৃদ্বি হলে ও প্রকৃতপক্ষে এই ণীতি প্রয়োগের ফলে অংশীদারদের অংশ অংশানুপাতে কমে যায় ।
সম্পত্তি বন্টনে রাদ বা ফেরত এর মতবাদ:
'আউল' এর মতবাদ আলোচনার আগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত সম্পত্তির অংশের যোগফল এক এর কম হতে পারে। মুসলিম সুন্নী আইনের বিধান মতে উত্তরাধিকারীদের সবাই 'অংশীদার' শ্রেণীভুক্ত হলেই কেবলমাত্র তাদের প্রাপ্ত অংশের যোগফল এক অপেক্ষা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, অর্থাত্‍ অংশীদারদে দেরকে তাদের স্ব স্ব অংশ বন্টন করে দেওয়ার পর কিছু সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকলেএই অবশিষ্ট অংশটুকু নেওয়ার জন্য কোন অবশিষ্টাংশভোগী বা দূরবর্তী আত্নীয় না থাকলেই অংশীদারদের অংশসমুহের যোগফল এক অপেক্ষা কম হয়। এমতাবস্থায় এই অবশিষ্ট সম্পত্তি অংশীদারদের প্রাপ্য অংশের অনুপাতে তাদের মধ্যে যদি ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলে তাদের অংশসমুহের যোগফল এক হয় । অংশীদারদের মাঝে এভাবে সম্পত্তির বাকি অংশ ভাগ করে দেবার বা প্রত্যাবর্তনের নীতিকে ফেরত বা 'রাদ' নীতি বলা হয় ।
ফেরত বা রাদ এর মতবাদের কিছু ব্যতিক্রম আছে:
(ক) অংশীদার বা দূরবর্তী আত্নীয়দের কেউ বর্তমান থাকলে স্বামী বা স্ত্রী কেউই রাদের নীতি অনুযায়ী ফেরতের অংশ পাবে না।
খ) কিন্তু যদি অন্য কোন উত্তরাধিকারী না থাকে, তবে ফেরতের নীতি অনুযায়ী অবশিষ্টাংশটি স্বামী বা স্ত্রীর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে। অর্থাত্‍ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী স্বামী বা বিধবা স্ত্রী হলে সম্পুর্ণ সম্পত্তিই অংশীদার হিসেবে স্বামী বা বিধবা স্ত্রী পাবে।
উদাহরণের মাধ্যমে ফেরত বা রাদ এর মতবাদ পরিস্কারভাবে বোঝা যাবে
উদাহরণ (১): মনে করি একজন হানাফী মুসলমান তার স্ত্রী, মাতা ও এক কন্যা রেখে মারা যান। এই তিনজন অংশীদারদের স্বাভাবিক প্রাপ্যসমুহ নিম্নরূপ:
স্ত্রী = ১/৮ = ৩/২৪
মাতা = ১/৬ = ৪/২৪
কন্যা = ১/২ =১২/২৪
তাদের অংশের সমষ্টি = ৩/২৪+৪/২৪+১২/২৪ = ১৯/২৪
স্ত্রী = ১/৮ = ৪/৩২ এক অপেক্ষা (১- ১৯/২৪ = ৫/২৪) কম। এই ৫/২৪ অংশ সম্পত্তি নেওয়ার জন্য যেকোন অবশিষ্টাংশ -ভোগী বা দূরবর্তী আত্নীয় না থাকায় অংশীদারদের কাছে 'রাদ নীতি' অনুযায়ী তাদের অংশ অনুপাতে ফেরত যাবে। কিন্তু 'রাদ ণীতির' ব্যতিক্রম অনুযায়ী মাতা ও কন্যা থাকায়, স্ত্রী, ফেরতের অংশ পাবেনা। স্ত্রীর অংশ ১/৮ অপরিবর্তিত থাকবে। বাকী ১ - ১/৮ = ৭/৮ অংশ মাতা ও কন্যা অংশানুপাতে পাবে। মাতা ও কন্যার স্বাভাবিক অংশ যথাক্রমে ১/৬ ও ১/২ একই হর বিশিষ্ট ভগ্নাংশ ১/৬ ও ৩/৬ এ রূপান্তরিত করা হবে। লবসমুহের সমষ্টি (১+৩) = ৪ কে ভগ্নাংশ দুটির সাধারণ হর গণ্য করে ভগ্নাংশ দুটি দিয়ে বাকী সম্পত্তি ৭/৮ কে গুণ করলেই চুড়ান্তভাবে সম্পত্তি বন্টন হয় ।
চুড়ান্ত বন্টন নিম্নরুপ: মাতা = ১/৬ = ১/৬ বৃদ্বি পেয়ে (৭/৮ এর ১/৪) = ৭/৩২
কন্যা = ১/২ = ৩/৬ বৃদ্বি পেয়ে (৭/৮ এর ৩/৪ ) = ২১/৩২
এখন স্ত্রী, মাতা ও কন্যার অংশ যথাক্রমে ৪/৩২, ৭/৩২ ও ২১/৩২ একত্রে যোগ করলে ৩২/৩২ অর্থাত্‍ ১ হয় ।
উদাহরণ (২): ক একজন সুন্নী মুসলমান। সে স্ত্রী এবং দুজন চাচাত ভাই (পিতার আপন ভাইয়ের পুত্র) ওয়ারিশ রেখে ইন্তেকাল করেছে। এখন মৃত ক এর সম্পত্তি বন্টন করতে হবে:

স্ত্রী চাচাতো ভাই
১/৪ অংশ বাকি (১ - ১/৪) = ৩/৪ অংশ
এক্ষেত্রে ক নিঃসন্তান বিধায় স্ত্রী ১/৪ অংশ প্রাপ্ত হয়েছে এবং বাকী সমস্ত অংশই (৩/৪) চাচাতো ভাইয়েরা পেয়েছে।
উদাহরণ (৩): একজন সুন্নী মুসলমান তার মাতা, আপন বোন এবং একজন বৈপিত্রেয় ভাইকে রেখে মারা যান ।
এক্ষেত্রে তাদের স্বাভাবিক অংশ নিম্নরূপ:
মাতা - ১/৬ (কারণ ,ভাই ও বোন আছে )
আপন বোন - ১/২
বৈপিত্রেয় ভাই - ১/৬
মোট অংশ = ১/৬ +১/২ + ১/৬ =৫/৬
কোন স্বামী বা বিধবা স্ত্রী না থাকায় মোট সম্পত্তির পরিমাণ হলো ১ (এক)। অংশীদারদের অনুপাত: ১/ ১/২: ১/৬ অর্থাত্‍ ১/৬+১/২+১/৬ = ১+৩+১ = ৫/৬।
এখন লব গুলির সমষ্টিকে সাধারণ হর হিসেবে ধরলে আমরা পাই, ১/৫:৩/৫:১/৫ অনুপাত ।
সমস্ত সম্পত্তির পরিমাণ এক। সুতরাং
মাতা = ১ এর ১/৫ = ১/৫
আপন বোন = ১ এর ৩/৫ = ৩/৫
বৈপিত্রেয় ভাই = ১ এর ১/৫ = ১/৫
সর্বমোট = ( ১/৫ +৩/৫+১/৫ ) = ১
উদাহরণ (৪): এক মৃত মুসলিম ব্যক্তি তার মাতা, কন্যা এবং পুত্রের কন্যা রেখে মারা গেল। তার সম্পত্তি নিম্নের হারে বন্টন করতে হব।
মাতা =১/৬
কন্যা =১/২
পুত্রের কন্যা = ১/৬
অংশসমুহ যোগ করে ( ১/৬+১/২+১/৬)= ৫/৬ অংশ।
এখন রাদ বা ফেরত নীতি প্রয়োগ করে
মাতা = ১/৬ বৃদ্বি করে =১/৫ অংশ
কন্যা =১/২ =৩/৬ বৃদ্বি করে = ৩/৫ অংশ
পুত্রের কন্যা = ১/৬ = ১/৬ বৃদ্বি করে = ১/৫ অংশ
.........................................................................
সর্বমোট যোগফল = ৫/৬ = ৫/৫
= ১ অংশ
উপরের সমাধানটি ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অইন মোতাবেক মাতা ফেরত নীতির মাধ্যমে আর অংশ পাবেনা। সেক্ষেত্রে,
মাতা = ১/৬
কন্যা = ৫/১৮
পুত্রের কন্যা = ১০/১৮
.....................................................
সর্বমোট যোগফল =১৮/১৮
অর্থাত্‍ ১৯৬১ সালের পরে মূল সম্পত্তি থেকে মাতার অংশ বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকবে তা কন্যা এবং পুত্রের কন্যাকে অবশিষ্টভোগী হিসেবে বাকী অংশ ভাগ করে দিতে হব। উপরোক্ত অংশসমুহ যোগ করে
(১/৬+৫/১৮+১০/১৮) = ১৮/১৮ =১
আউল বা বৃদ্বিকরণ নীতি এবং রদ বা প্রত্যর্পণ নীতির মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও পার্থক্য:
মুসলিম উত্তত্মরাধিকার আইনে অংশীদারদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনের বন্টন ধারার সামঞ্জস্য বিধান করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে যে দুটি নীতির মাধ্যমে অংশীদারদের সম্পত্তি সুষ্ঠভাবে বন্টন করা হয় সেই নীতি দুটির মধ্যে পারস্পরিক পার্থক্যগুলো বন্টন ধারার ক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠে সেগুলো -
১ । বৃদ্বিকরণ নীতি (আউল) এবং প্রর্ত্যপণ নীতি (রাদ) সম্পুর্ণভাবে একে অন্যের বিপরীতমুখী ।
২। প্রর্ত্যপন নীতির ক্ষেত্রে অন্যান্য অংশীদারদের উপস্থিতিতে স্বামী বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু বৃদ্বিকরণ নীতির ক্ষেত্রে এধরনের কোন ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় না ।
৩ । বৃদ্বিকরণ নীতির আলোকে অংশীদারদের অংশ আনুপাতিক হারে কমে যায়। অপরপক্ষে, প্রত্যর্পণ নীতির আলোকে প্রত্যেক অংশীদারদের অংশ (স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত ) বৃদ্বি পায়।
৪। বৃদ্বিকরণ নীতির আলোকে বন্টনের সামঞ্জস্য বিধানের প্রয়োজনে হরকে বৃদ্বি করে লবের সমতুল্য করতে হয়। অপরপক্ষে, প্রত্যর্পণ নীতির আলোকে স্বামীর বা স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বা অবর্তমানে হরকে কমিয়ে লবের সমান করতে হয়।
৫। বৃদ্বিকরণ নীতির আলোকে অন্যান্য অংশীদারদের মত স্বামী বা স্ত্রীর অংশ ও আনুপাতিক হারে কমে যায়। অপরদিকে, প্রত্যর্পণ নীতির আলোকে অন্যান্য অংশীদারদের মত মৃত ব্যক্তির অন্য কোন ওয়ারিশ থাকাবস্থায় স্বামী বা স্ত্রীর অংশের কোনরকম রদবদল হয়না ।
৬ । প্রত্যর্পণ নীতির আলোকে অংশীদারেরা (স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত) বর্ধিত অংশ পায়। অপরপক্ষে বৃদ্বিকরণ নীতির আলোকে অন্যান্য অংশীদারদের মত স্বামী বা স্ত্রীর এর অংশ ও আনুপাতিক হারে কমে যায়। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মোট চারটি পদ্বতিতে অংশীদারদের অংশ পুনঃবন্টন বা রদনীতির প্রয়োগ করা হয়; যথা:
যদি ওয়ারিশেরা এক জাতীয় হয় এবং তাদের সাথে স্বামী বা স্ত্রী না থাকে তাহলে ওয়ারিশদের সংখ্যাকেই মূল সম্পত্তি ধরে প্রত্যেককে এক অংশ প্রদান করতে হব।
উদাহরণ: (ক)
মৃত ব্যক্তি
কন্যা কন্যা
১/২ ১/২
মৃত ব্যক্তি
আপন বোন
১/২
আপন বোন
১/২
২। যদি স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে দুই বা ততোধিক জাতীয় ওয়ারিশ একত্র হয়, তাহলে তাদের অংশ অনুযায়ী মূল সম্পত্তি ধরে তাদের নিজ নিজ অংশ প্রদান করতে হবে। অতঃপর প্রদত্ত অংশাবলীর যোগফল যা হয়, তাই মূল সম্পত্তিতে পরিগণিত হবে; যেমন -
উদাহরণ:
মৃত ব্যক্তি
মাতা কন্যা
১/৪ ৩/৪
৩ । স্বামী বা স্ত্রীর সাথে অপর কোন এক জাতীয় ওয়ারিশ থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর নির্দিষ্ট অংশ অনুযায়ী মূল সম্পত্তি ধরে তাকে তার (স্বামী বা স্ত্রীর ) নির্দিষ্ট অংশ প্রদান করার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা পর ওয়ারিশদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে হবে; যেমন-
উদাহরণ:
মৃত ব্যক্তি
স্বামী কন্যা কন্যা কন্যা
১/৪ ১/৪ ১/৪ ১/৪
৪। স্বামী বা স্ত্রীর সাথে অপর কোন দুই বা ততোধিক ওয়ারিশ থাকলে প্রথমত স্বামী বা স্ত্রীর নির্দিষ্ট অংশ অনুযায়ী মূল সম্পত্তি ধরে তাকে তার নির্দিষ্ট অংশ প্রদান করতে হবে।তারপর অন্যান্যওয়ারিশদের নির্দিষ্ট অংশ অনুযায়ী একটি পৃথক অংশ ধরে নিতে হবে। অতঃপর স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্যান্য ওয়ারিশদেরকে প্রদত্ত অংশাবলীর যোগফল যদি তা সর্বপ্রথমে স্বামী বা স্ত্রীকে মূল সম্পত্তি হতে প্রদান করার পর তাই হয় তবে এখানেই ফারায়েজ শেষ হবে। আর যদি তা না হয়ে বেশী বা কম হয় সেক্ষেত্রে উক্ত যোগফল দ্বারা মূল সম্পত্তি হতে সর্বপ্রথমে স্বামী বা স্ত্রীকে প্রদত্ত অংশকে গুণ করে এবং মূল সম্পত্তি হতে স্বামী বা স্ত্রীকে প্রদান করার পর যা অবশিষ্ট ছিল তাদ্বারা অন্যান্য ওয়ারিশদেকে প্রদত্ত অংশসমুহকে গুণ করে নিলে ফারায়েজ শেষ হব। উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে
মৃত ব্যক্তি
কন্যা মাতা বৈপিত্রেয় বোন
১/৪ ১/২ ১/৪
ওয়ারিশদের স্বত্বের দাবী ত্যাগ বা নাদাবী:
যদি কোন ওয়ারিশ অন্যান্য ওয়ারিশদের সাথে আপোষ সূত্রে ত্যক্ত সম্পত্তি হতে কিছু গ্রহণ করতঃ তার ওয়ারিশি স্বত্তের দাবী ত্যাগ করে চলে যা, তাকে ফারায়েজ তাখারোজ বা ওয়ারিশদের স্বত্বের দাবী ত্যাগ বা না দাবী বলে। এরূপ অবস্থায় না দাবী প্রদানকারীকে প্রথমত: পারায়েজ করতে হবে। তত্পর তার প্রদত্ত অংশ মূল সম্পত্তি হতে বাদ দিলে যা থাকে তাই মূল সম্পত্তিতে পরিণত হবে এবং সে অনুযায়ী অবশিষ্ট ওয়ারিশগণ পাবে। যেমন:
উদাহরণ:
মৃত
স্বামী (৩) মাতা (২) চাচা (বাকি ১)
এক্ষেত্রে মনে করি স্বামী না দাবী প্রদান করেছে। অতএব তার প্রদত্ত অংশ অর্থাত্‍ ৩ মূল সম্পত্তি ৬ অংশ থেকে বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকে ৩ অংশ। এখন স্বামীর অংশ বাদ দিয়ে বাকী ৩ অং শে পাবে মাতা ২ অংশ এবং চাচা ১ অংশ ।

Comments

  1. প্লিজ আমার উত্তরটা জরুরী। ধরুন, এক ব্যক্তির দুটি স্ত্রী ছিল। প্রথম স্ত্রী মারা গেলেন। তার একটি ছেলে রেখে গেছেন। তারপর ঐ ব্যক্তি মারা গেলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর একটি ছেলে আছে।
    এখন সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে, দ্বিতীয় স্ত্রী স্বামীর সম্পদের অংশ পাবে। কিন্তু মৃত প্রথম স্ত্রী(প্রথম স্ত্রীর সন্তান) কি স্বামীর সম্পদের অংশ পাবে?

    ReplyDelete
  2. একজন ব্যাক্তি মারা যাওয়ার পর এক চাচার চাচাত ভাই ও অন্য চাচার চাচাত বোন এবং অন্য চাচার চাচাত ভাইয়ের ভাতিজী ওয়ারিশ রাখিয়া মৃত্যুবরণ করেন। এখনা তাহাদের মধ্যে কিভাবে সম্পত্তি বন্টন হইবে।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা