দেশের প্রথম ডিজিটাল আদালত

দেশের প্রথম ডিজিটাল আদালত

এক আসামির চট্টগ্রাম মহানগরীতে মামলা আছে। কিন্তু ১৬ থানার কোন থানায় তার মামলাটা জানা নেই। জানতে হলে থানায় থানায় ঘুরতে হবে। কোর্টে কোর্টে চক্কর কাটতে হবে। ঘুরে ঘুরে খুঁজে খুঁজেও যে পাওয়া যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। কিংবা মুন্না (ছদ্মনাম) নামের এক দাগী আসামির নামে কোন থানায় কয়টি মামলা আছে তা জানা নেই। জানতে হলে থানায় থানায় নথিপত্র ঘেঁটে হয়রান হতে হবে।
কিন্তু না। দিন বদলে গেছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে এক ক্লিকেই এখন সব তথ্য চলে আসছে কম্পিউটারের মনিটরে। দরকার শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের কম্পিউটার শাখায় যোগাযোগের। সেখানে তারাই আপনাকে এক ক্লিকে আবুল হোসেন বা মুন্নার নামে কত নম্বর মামলাটি আছে এবং তা কোন কোর্টে চলমান, মামলার তারিখ কত, কোন পর্যায়ে আছে মামলাটি আর আগের তারিখে তা কোন অবস্থায় ছিল তা বের করে দিতে পারবেন।
গত ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এভাবেই শুরু হলো ডিজিটালাইজড যুগের। তবে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে সফলতার মুখ দেখার পর এখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন সিএমএম আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ।
তিনি জানান, চট্টগ্রামের আদালতে যাত্রা শুরু হলো এক নতুন যুগের। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির প্রতিটি আদালতের কজলিস্ট এখন ডিজিটাল ল্যান নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির আওতায়। ল্যান প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে প্রতিদিন কোন কোর্টে কয়টি মামলার কাজ হচ্ছে, প্রতিদিন মামলার নিস্পত্তি কয়টি তা একটি কম্পিউটারের সামনে বসেই জানা সম্ভব।
একটি মামলার ধার্য তারিখ ৩ মাস পরে পড়লেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে মামলার পক্ষ এর মধ্যে ২/৩টি ধার্য তারিখে হাজিরা দিয়েছেন। সুবিধাভোগী শ্রেণী প্রতিমাসে তারিখের কথা বলে পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত। কিন্তু চট্টগ্রামের বর্তমান সিএমএম যোগদানের পর আদালত প্রাঙ্গনে তারিখ নেয়া নিয়ে দীর্ঘ দিনের চালু থাকা হয়রানির পথকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রতিটি আদালতের কজলিস্ট এখন প্রতিটি কোর্টের সামনে প্রতিদিন বিকেলে টানিয়ে দেয়া হয়। ফলে তারিখ নেয়ার জন্য কোনো পক্ষকে আর আইনজীবীর সহকারীর পেছনে পেছনে ঘুরতে হয় না কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে প্রতারিত হতে হয় না। কজলিস্ট নোটিশ বোর্ডে আসার পাশাপাশি ল্যান প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে চট্টগ্রাম সিএমএম আদালত থেকে এই প্রথম চালু হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নকল ডেলিভারি। প্রথমে নকলখানায় নকলের জন্য নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয়। এরপর ফলিও এসেসমেন্ট হয়ে গেলে একটি ক্ষুদেবার্তা যাবে নকলের দরখাস্তকারীর মোবাইলে। ফলিও জমা দেয়ার পর নকল প্রস্তুত হয়ে গেলে সার্টিফাইড কপি রেডি ফর ডেলিভারি মর্মে আরেকটি ম্যাসেজ যাবে নকলের দরখাস্তকারীর মোবাইল নম্বরে। প্রযুক্তির এই ব্যবহারের ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণের একটা নকল পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ধর্ণা দিতে হবে না। কোনো প্রকার সরকারি প্রজেক্ট ছাড়াই চট্টগ্রামের সিএমএম-এর ঐকান্তিক চেষ্টা ও উদ্যোগে বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার করার এই পদ্ধতি চালু করার ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণকে দিনের পর দিনে হয়রানি হওয়া, প্রতারিত হওয়ার পথগুলো অনেকাংশেই বন্ধ হয়ে যাবে।
অতীতে বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে আদালত প্রাঙ্গনে প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হলেও প্রজেক্ট বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের ধারাবাহিকতা না থাকায় সেই সব প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কার্যক্রম কখনও মুখ থুবরে পড়েছে কিংবা কখনো বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে কর্মরত বর্তমান সিএমএম তার উদ্যমী চেষ্টাগুলোকে কোনো প্রজেক্টের আওতায় না এনে সরকারি কিছু বাজেট দিয়ে নিজস্ব অদম্য চেষ্টায় নিজ বিচারিক গণ্ডিতে বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাল উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার উদ্যোগে কিছু তরুণ অফিসার ও কর্মচারীদের নিয়ে নিজস্ব ক্ষুদ্র পরিসরে প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিচারপ্রার্থী জনগণের কষ্টকে লাঘব করে দ্রুততম সময়ে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চেষ্টাগুলোর বর্তমান অবস্থার পাশাপাশি ভবিষ্যত সাফল্য নির্ভর করবে পরবর্তীতে আসা কর্মকর্তারা যদি এই কাজগুলোকে সঠিকভাবে চালিয়ে যান।

Comments

Popular posts from this blog

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা