অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি তুললে ১০ বছর কারাদণ্ড
অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ছবি তুললে ১০ বছর কারাদণ্ড
সখের বশে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই হয়তো অনেকে অন্যের ব্যক্তিগত ছবি তোলেন উক্ত ব্যক্তির অনুমতি ছাড়াই। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছবি প্রকাশও করেন অনেক সময়। কিন্তু এবার সাবধান! এমন ঘটনায় যে কেউ ফেঁসে যেতে পারেন অনায়াসেই।
অভিযোগ প্রমাণ হলেই ভোগ করতে হবে ১০ বছরের কারাদণ্ড। আর অভিযোগের পর একবার পুলিশের হাতে ধরা খেলেই জামিন মিলবে না মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত। তবে অনিচ্ছাকৃতবাবে ঘটেছে প্রমাণ করতে পারলে বেঁচে যেতে পারেন।
প্রস্তাবিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০১৫’ খসড়ায় এ বিধান রাখা হয়েছে। খসড়া আইনটির ১৪ ধারায় গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অপরাধে এ শাস্তির কথা বলা হয়।
শুধু তাই নয়, অন্যের ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও হ্যাকিং করলেও একই শাস্তি ভোগ করতে হবে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দায়ে।
কি আছে প্রস্তাবিত সাইবার আইনে
খসড়া আইনের ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘(১) কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তাহার ব্যক্তিগত ছবি তোলে, প্রকাশ করে বা প্রেরণ করে; তাহা হইলে এমন কার্য ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অপরাধ হইবে। (২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন হ্যাকিং অপরাধ করিলে তিনি অনধিক ১০ বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক দশ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিতে হইবে।’
আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- ‘ব্যাখ্যা-(ক) ‘প্রেরণ’ অর্থ ইলেকট্রনিক উপায়ে কোনো দৃশ্যমান ছবি প্রদর্শিত করিবার অভিপ্রায়ে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমূহের নিকট প্রেরণ করা; (খ) ছবি সম্বন্ধে ‘দৃশ্য ধারণ’ অর্থ যে কোনো উপায়ে ভিডিও টেপ, আলোকচিত্র, ফিল্ম বা রেকর্ড করা; (গ) ‘ব্যক্তিগত এলাকা’ অর্থনগ্ন বা অন্তর্বাস পরিহিত যৌনাঙ্গ, যৌনাঙ্গের আশপাশ, নিতম্ব বা মহিলা স্তন; (ঘ) ‘গোপনীয়তা লঙ্ঘনের পরিস্থিতির ক্ষেত্র’ অর্থ কোনো পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তির যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশা থাকতে পারে যে-(অ) কোনো ব্যক্তি গোপনীয়ভাবে অনাবৃত হইতে পারেন, এমতাবস্থায় তার ব্যক্তিগত এলাকায় তার নজর এড়িয়ে চিত্রবন্দী করা হয়েছিল; অথবা (আ) সরকারি বা ব্যক্তিগত এলাকা নির্বিশেষে কোনো ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত এলাকার এমন কোনো অংশে ছিল যা জনসাধারণের নিকট দৃশ্যমান হবে না।’
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বদৌলতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেকেই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। তারাও আর ছাড় পাবেন না। সাইবার আইনে তাতেও শাস্তি রয়েছে দৃষ্টান্তমূলক।
খসড়া আইনের ১১ ধারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ইলেট্রনিক মেসেজে ভুল তথ্যের জন্য যদি কারো ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে অপরাধ বলে গণ্য হবে। আর ওই অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডও দেওয়া হবে।
কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি বা অশ্লীল উপাদানে প্রবেশ করলেই অরাধ হিসেবে গণ্য হবে। পর্নোগ্রাফ বা অশ্লীল উপাদন প্রকাশ ও উপাদানে প্রবেশ করার এ অপরাধের শাস্তি ৭ বছর কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডও হতে পারে।
খসড়া সাইবার আইনের ১৫ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়- কোনো ব্যক্তি কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি বা অশ্লীল উপাদান প্রকাশ করলে, উৎপাদন করলে, স্থানান্তরযোগ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থায় জমা করলে, শিশু সমন্ধীয় অশ্লীল উপাদান সংরক্ষণ করলে অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। এ ধারায় বিজ্ঞাপনে অশ্লীল উপাদান থাকলে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উসকানি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া এবং ব্লগার হত্যাসহ নানা ঘটনার পর এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগ আইনের খসড়াটি প্রস্তুত করে।
প্রস্তাবাবিত সাইবার আইন নিয়ে চলমান আলোচনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার জন্যই আইনটি করা হচ্ছে। আগামী আগস্ট মাসে খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর খসড়াটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে।
Comments
Post a Comment