জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কেঃ



জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস
সম্পর্কেঃ

=======================
ঘটনাঃ ধরুন, আপনি আপনার প্রতিবেশির
সাথে জমি জমা সংক্রান্ত একটি
বিষয়ে বিরোধের প্রেক্ষিতে দুই
পক্ষের মধ্যে চলমান মামলার এক
পর্যায়ে আদালতের কাছে এই মর্মে
নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন
যে,যেহেতু আপনি জমির দখলে আছেন
এবং আপনার কাছে জমির কাগজ
পত্রাদি ও রয়েছে সুতরাং মামলার
চূড়ান্ত নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমির
ভোগ দখলে যাতে আপনার প্রতিবেশী-
বিবাদী কোনরুপ হস্তক্ষেপ না করতে
পারে সেইমর্মে তাকে আদেশ দেওয়া
হোক। আদালত দুই পক্ষের আইনজীবীদের
বক্তব্য শুনে আপনার পক্ষে আস্থায়ী
নিষেধাজ্ঞা জারী করলেন এবং
বিবাদীকে এই মর্মে নির্দেশ দিলেন
যে, তিনি যেন পরবর্তী আদেশ না
দেওয়া পর্যন্ত আপনার ভোগ দখলে
বাঁধা না দেয়।
কিন্তু আদেশ দেওয়ার সপ্তাহান্ত না
পেরুতেই বিবাদী তার ছেলেদের
নিয়ে উক্ত তর্কিত ভূমিতে প্রবেশ
করতঃ গাছের ফল ও ডালপালা কেটে
নিয়ে গিয়েছে; শুধু তাই নয় আপনাকে
এই মর্মে শাসিয়েছে যে, আপনি যদি
তিন দিনের মধ্যে জমি ছেড়ে না দেন
তাহলে আপনাকে দেখে নেওয়া হবে।
অর্থাৎ তিনি আদালতের
নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেছেন।
আলোচ্য বিষয়ঃ আমি এখানে
দেওয়ানী মামলার প্রতিকার পর্যায়ে
আলোচনার সূত্র ধরে দেওয়ানী
আদালতের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও
আইনগতভাবে কিভাবে পদক্ষেপ
নেওয়া উচিৎ সে বিষয়ে আলোকপাত
করব।
আপনার দেওয়ানী প্রতিকারঃ আপনি
এখানে আপনার নিযুক্ত আইনজীবীর
মাধ্যমে উক্ত বিবাদীর বিরুদ্ধে
ভায়োলেশন কেইস করতে পারবেন।
অর্থাৎ, দেওয়ানী আদালতের আদেশ,
নিষেধাজ্ঞা, রায় বা ডিক্রি ভঙ্গের
বিরুদ্ধে আদালতের মাধ্যমে বিবাদীর
বিরুদ্ধে যে প্রতিকার তার জন্যই
ভায়োলেশন মামলা।
ভায়োলেশন মামলায় আদালত
বিবাদীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ছয় মাসের
দেওয়ানী কারাদন্ডের আদেশ সহ
অর্থদণ্ড দিতে পারেন।
ভায়োলেশন মামলার প্রকৃতিঃ এই
মামলার অধীনে আদালতের ক্ষমতাকে
Quasi Criminal বা প্রায় ফৌজদারি
প্রকৃতির ক্ষমতা বলা হয়। অর্থাৎ
ভায়লেশন কেইসে আসামীকে মূল দন্ড
হিসাবে কারাদন্ডের আদেশ দিতে
হলে সচরাচর দেওয়ানী মামলায় অনুসৃত
নিয়মের বাইরে ও আপনাকে আরো কিছু
নিয়ম মানতে হবে যা অনেকটা
ফৌজদারী আদালতের বিচারিক
ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
ভায়োলেশন মামলায় আদালতের অনুসৃত
পদ্ধতিঃ
১। ভায়োলেশন মামলায় দেওয়ানী
আদালত এমন ভাবে ইস্যু ফ্রেম করবেন
যাতে ফৌজদারী মামলায় চার্জের সব
উপাদানগুলো সেখানে নিহিত
থাকে। (অর্থাৎ ইস্যু ফ্রেমিংয়ের
সাথে ঘটনার Time, Place, Manner ইত্যাদি
তুলে ধরতে হবে)। এরুপ পন্থায় ইস্যু ফ্রেম
করার উদ্দেশ্য এই যে, বিবাদী যাতে
নিজেকে ডিফেন্ড করা থেকে
কোনরুপ বঞ্চিত না হয় কারণ এটি এখন
দেওয়ানী মামলার রুপ থেকে
ফৌজদারী মামলায় রুপ পরিগ্রহ করছে ;
(9 DLR 444) এবং 17 MLR (HCD) 2012. P.166
২। মনে রাখতে হবে যে, দেওয়ানী
আদালত এখন আই মামলার বিচার করলেও
মামলার প্রকৃতি এখন আর দেওয়ানী নয়।
সুতরাং, বিবাদী যে আদালতের
নির্দেশ অমান্য করে নিষেধাজ্ঞা
ভঙ্গ করেছে এটা বাদী-দরখাস্তকার
ীকেই তা প্রমাণ করতে হবে। অর্থাৎ
বার্ডেন অব প্রুফ বাদী-দরখাস্তকারীর
উপর। বাদীকে এখানে দেখাতে হবে
যে, নিষেধাজ্ঞার আদেশ সম্পর্কে
বিবাদী- ইনজাংশনভঙ্গকারী
ওয়াকিবহাল ছিলেন এবং তিনি
জ্ঞানতঃ আদালতের এই
নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেছেন। (45 DLR
718)
এবার এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের একটি
রিপোর্টেড কেইসের বর্ণনা দিব। G.M.,
P.B.S., Mymensingh-1, Muktagacha-1 Vs.
Abdullah Hel Kafi (2012) HCD. ঘটনায় প্রকাশ,
এই মামলার মূল বাদী আঃ হইল কাফির
কাছে পল্লী বিদ্যুত সমিতি,
ময়মনসিংহ-১ কিছু বিল বাকী বলে
দাবী করার প্রেক্ষিতে বাদী সেটি
অস্বীকার করে উক্ত বকেয়া সংক্রান্ত
কাগজ বাতিলের দাবীতে Cancellation
মামলা করেন এবং প্রেয়ার পরশনে এই
মর্মে আস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দাবী
করেন যাতে মামলা নিস্পত্তি না
হওয়া পর্যন্ত বিবাদী পল্লী বিদ্যুৎ
সমিতি তার বৈদ্যুতিক লাইন কেটে
না দেয়। আদালত বাদীর পক্ষে
নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেন। বাদীর
ভাষ্য অনুযায়ী বিবাদী পল্লী বিদ্যুত
সমিতির জিএম আদালতের
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিদ্যুতের
লাইন কেটে দেয় ফলে প্রকৃতঃ
আদালতের আদেশ অমান্য করে। বাদী
তার প্রেক্ষিতে বিবাদীর বিরুদ্ধে
ভায়োলেশন মামলা করে। অন্য দিকে
বিবাদী তার লিখিত বক্তব্যে বলেন
যে, সে প্রকৃত অর্থে আদালতের
নিষেধাজ্ঞার আদেশ সম্পর্কে কিছু
জানতেন না; জানলে তিনি
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতেন না।
তাছাড়া, বাদী বা অন্য কেউ তাকে
এই বিষয়ে কোন নোটিশ প্রদান করেন
নি। যাই হোক, নিন্ম আদালত সমূহ
যথাক্রমে সহকারী জজ বিবাদীকে ১৫
দিনের দেওয়ানী কারাদন্ডের আদেশ
দেন। বিবাদী আপীল করলে তৎকালীন
সাব-অর্ডিনেট জাজ (বর্তমানে) যুগ্ম
জেলা জজ ও আপীল খারিজ পূর্বক
সহকারী জজের রায় বহাল রাখেন।
পরবর্তীতে মূল বিবাদী ও বর্তমান
আপীলকারী পল্লী বিদ্যুতের জি এম
হাইকোর্টে আপীল দায়ের করেন।
হাইকোর্ট চূড়ান্ত শুনানিঅন্তে
আদালতের এখতিয়ার নিয়ে কোন প্রশ্ন
না তুললেও কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটির দরুন
বিজ্ঞ সহকারী জজ ও যুগ্ম জেলা জজের
আদেশ রহিত পূর্বক বিবাদী-পিটিশনার
(জিএম) কে অত্র মামলা থেকে অব্যহতি
দেন। আদলতের মূল ফাইন্ডিংস গুলো
হলঃ
• বাদী বিবাদীকে নিষেধাজ্ঞার
ব্যাপারে কোন নোটিশ দেন নি
অর্থাৎ বিবাদী এ ব্যাপারে কিছুই
জানতেন না;
• মামলা প্রমানের দায় বাদীর উপর
থাকলেও বাদী এক্ষেত্রে কোন
ভূমিকাই পালন করেন নি বরং
বিবাদীই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে
তিনি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে অজ্ঞ
ছিলেন;
• বাদী শুধুমাত্র নিজেকে ছাড়া অন্য
কোন সাক্ষী প্রমাণ বা দলিল হাজির
করেন নি যা সাক্ষীর নিরপেক্ষতা
নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করে;
• বিজ্ঞ নিন্ম আদালত মামলার প্রকৃতি
বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন, আদালত সমূহ
ফৌজদারী মামলার মূলনীতি সমূহ না
মেনে আসামীকে দেওয়ানি
কারাদন্ডের আদেশ দেয়েছেন যা
টেনাবল নয়। ইত্যাদি।
সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে, “ Very often the court
has to make an order commanding a person to do
something or restraint him in some way. If he
disobeys, the court has one weapon in its armoury
which it can use. It can punish him for contempt,
either by fine or by imprisonment. It is quasi
criminal offence as mentioned earlier. So, it must
be proved beyond reasonable doubt.” Per Anwarul
Haque in G.M., P.B.S., Mymensingh-1,
Muktagacha-1 Vs. Abdullah Hel Kafi 17 MLR (2012)
HCD (Para 17)

Comments

Popular posts from this blog

** 'হেবা' ও 'হেবা-বিল-এওয়াজ' কী? **

জেনে নিন ভায়োলেশন কেইস সম্পর্কে

শোন এরেস্ট (Shown Arrest) কাকে বলে ? ..শিশুদের গ্রেপ্তারে হাতকড়া পরানো যাবেনা